করোনা মহামারি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিভাগ সফল হয়েছে বলেই বাংলাদেশ স্বস্তিতে আছে বলে মন্তব্য করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতের সফলতার কারণেই গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে বাংলাদেশ ১৭ কোটির বেশি বা দেশের ৮৫ ভাগ মানুষকে টিকা দিতে সক্ষম হয়েছে। অথচ আফ্রিকার দেশগুলিতে মাত্র ১২ ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর চারটি হাসপাতালে নতুন করে ১২৬টি ডায়ালাইসিস বেড উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মাঠে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় গোটা বিশ্ব যেখানে টালমাটাল অবস্থায় আছে সেখানে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। আমাদের রেমিট্যান্স ঊর্ধ্বগতিতে রয়েছে, দেশে খাদ্য সংকট হয়নি, মানুষ কোথাও না খেয়ে থাকেনি, পদ্মা সেতু বাস্তবায়নসহ সব মেগা প্রজেক্টের কাজ পুরোদমে চলছে।
তিনি বলেন, মহামারিকালেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি না কমে আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে, চারটি নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, ২০টি নতুন মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করা হচ্ছে, দেশের সব জেলা হাসপাতালে ১০ বেডের আইসিইউ বেড ও ১০ বেডের ডায়ালাইসিস বেড করার কাজ এগিয়ে চলছে। করোনা মোকাবিলা করেই বর্তমান সরকারের উন্নয়নকাজগুলি দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।
‘এসবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের স্বাস্থ্যখাতের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলেই।’
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বেড বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, এই হাসপাতালে আগে বেড ছিল ৮০০টি। আমরা এটিকে ঊধ্র্বমুখী সম্প্রসারণ করার মাধ্যমে এখন ১৩৫০ বেড করেছি। নতুন আরো ২৪০ বেড বৃদ্ধির কাজ চলমান রয়েছে। আজকেই কুর্মিটোলা, মুগদা, মিটফোর্ড হাসপাতালের সঙ্গে একযোগে আরো ১২৬টি নতুন ডায়ালাইসিস সেন্টার স্থাপন করা হলো। এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে উন্নত বিশ্বের হাসপাতালের ন্যায় নতুন ২০টি বেড স্থাপন করা হলো। একইসঙ্গে, ঢাকার হাসপাতালের পাশাপাশি ঢাকার বাইরে আট বিভাগে ৮টি ১৫ তলা বিশিষ্ট সমন্বিত ক্যান্সার হাসপাতাল নির্মাণের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে।
তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছি ঢাকার মানের সেবা ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে দিতে। এজন্য জেলা হাসপাতালে দ্বিগুণ বেড বৃদ্ধিসহ মফস্বল এলাকায় চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিতে ১৪ হাজার ১৫৬টি কমিউনিটি সেন্টার করা হয়েছে। এগুলি থেকে দিনে নয় লাখেরও বেশি মানুষ চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। চিকিৎসা সেবায় বর্তমান সরকারের ডিসেন্ট্রালাইজেশন চিন্তার ফসল এটি।
করোনার টিকাদান প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, সব মিলিয়ে এখন ১৭ কোটির বেশি ডোজ টিকা দিতে পেরেছি। আমাদের টার্গেটের প্রায় সাড়ে ১১ কোটি মানুষ টিকা পেয়েছে। হাতে এখন আমাদের ১০ কোটির মতো টিকা আছে। এখনো অনেকেই টিকা নেননি বা নিতে চাচ্ছেন না। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে বর্তমানে কোভিডে মৃত্যুর ৮৫ ভাগ মানুষই টিকা না নেওয়াদের মধ্যে। আক্রান্তেও তারা মানুষ শীর্ষে।
দেশ কোভিডে এত ভালো করেছে সঠিক চিকিৎসা সেবা ও সময় মতো টিকা দেওয়ার কারণেই। এজন্য টিকা নিতে দেশের অবশিষ্ট মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটি সভ্য জাতি বলেই দেশের এত বিশাল সংখ্যক মানুষ স্বল্প সময়েই টিকা গ্রহণ করেছেন। আগামীতেও বাংলাদেশ সভ্যতার নজির স্থাপন করবে এবং কোভিড মোকাবিলায় বিশ্বের রোল মডেল হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, ঢাকার মানের চিকিৎসা সেবা এখন বিভাগীয় শহর থেকে দিতে প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের চেষ্টা থাকবে দ্রুততার সঙ্গে দেশের প্রান্তিক মানুষকে উন্নত মানের চিকিৎসা সেবার আওতায় নিয়ে এসে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা। সে অনুযায়ী এই করোনাকালেও স্বাস্থ্যখাতে ৪০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর খলিলুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর এবিএম খুরশিদ আলম, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) নাজমুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর আহমেদুল কবীরসহ অন্যান্য ঊধ্র্বতন কর্মকর্তারা।