কভিডে আর্থিক সহায়তায় পিছিয়ে বাংলাদেশ

বিশেষ প্রতিনিধি

বিশ্বব্যাংক
ছবিঃ সংগৃহীত

কভিড মোকাবিলায় সরকারের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশে কভিড মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে যে তারল্য সহায়তা ঘোষণা করা হয়, তা মোট দেশজ উৎপাদনের মাত্র ২ শতাংশ। বাংলাদেশের মতো নিম্ন-মধ্যম আয়ের অন্য কিছু দেশ এর চেয়ে বেশি সহায়তা দিতে পেরেছে। উন্নত দেশগুলো দিয়েছে কয়েক গুণ বেশি। গতকাল মঙ্গলবার ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদনে এমন পরিসংখ্যান রয়েছে। প্রতিবেদনে অবশ্য বাংলাদেশকে নিয়ে আলাদা কোনো বিশ্নেষণ নেই।

কভিড সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশ কয়েক দফা আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করা হয়। যদিও এর বেশিরভাগই ঋণ। এ কারণে অর্থনীতিবিদ অনেকেই এই অঙ্ককে সরকারের প্রত্যক্ষ আর্থিক সহায়তা বলতে নারাজ। তারা মনে করেন, কভিড মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্তদের সরাসরি আর্থিক বা খাদ্য সহায়তা অপর্যাপ্ত ছিল।

বিশ্বব্যাংকের এবারের বিশ্ব উন্নয়ন প্রতিবেদন মূলত অর্থায়ন নিয়ে। প্রতিবেদনের শিরোনাম- সমতাভিত্তিক পুনরুদ্ধারের জন্য অর্থায়ন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কভিড সংকট এবং অস্বচ্ছ ঋণের কারণে সৃষ্ট আর্থিক ভঙ্গুরতার ক্রমবর্ধমান ঝুঁকিতে রয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। যেহেতু মূল্যস্ম্ফীতি এবং সুদের হার বাড়ছে, সেহেতু এসব দেশের মজবুত ভিত্তির আর্থিক খাত গড়ে তোলার দিকে নজর দিতে হবে।

উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণ এবং লুকানো ঋণ নিম্ন আয়ের পরিবার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে কভিড মোকাবিলায় আর্থিক সহায়তায় নির্ধারিত ৩০টি দেশের পরিসংখ্যান ছক আকারে দেওয়া হয়েছে। এতে দেখা যায়, জিডিপির সর্বাধিক ৪৬ শতাংশ আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ইতালি। প্রায় ৪৫ শতাংশ দিয়েছে জাপান। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত দিয়েছে জিডিপির ১০ শতাংশ। নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মধ্যে ঘানা দিয়েছে জিডিপির ৪ শতাংশ। ইথিওপিয়া দিয়েছে ৩ শতাংশের মতো। বাংলাদেশের মতো ২ শতাংশ আর্থিক সহায়তা দিয়েছে নাইজার ও মেক্সিকো।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মনে করেন, সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর ভেতরে আর্থিক এবং খাদ্যসহায়তা খুবই কম। প্রণোদনার বড় অংশই হাইব্রিড। মূলত ব্যাংকনির্ভর ঋণে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। সরকার এমন কিছু প্রকল্প এখানে ঢুকিয়েছে যেগুলো আদৌ প্রণোদনা হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। প্রণোদনার মধ্যে প্রত্যক্ষ সহায়তার পরিমাণ খুবই সামান্য।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে কভিডের কারণে যেসব দেশে বিক্রি কমে যায়, সেই তালিকায় ওপরের দিকে রয়েছে বাংলাদেশ। একটি নির্দিষ্ট সময়ের এক জরিপের তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিক্রি কমে যায় প্রায় ৬৫ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়া, শ্রীলঙ্কাসহ আরও কয়েকটি দেশে এর চেয়ে বেশি বিক্রি কমে যায়। অন্যদিকে ৪০টি দেশের ওপর পরিচালিত আরেক জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৮৮ শতাংশ ঋণগ্রহীতা মনে করেন, কভিডের প্রভাবে তাদের ঋণ যথাসময়ে ফেরত দেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে এ হার সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ।

শেয়ার করুন