সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে অভি মেডিক্যাল হল থেকে শাহনাজ পারভীন জোৎস্নার (৩৪) ৬ টুকরো লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ইতিমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জোৎস্নাকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যার কথা স্বীকার করেছেন।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)’র কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মুক্তা ধর।
এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- ওষুধের দোকানের মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপ (৩০), অনজিৎ চন্দ্র গোপ (৩৮) ও অসীত গোপ (৩৬)।
জিতেশ কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সইলা গ্রামের যাদব চন্দ্র গোপ ও অনিতা রানী গোপের ছেলে। অনজিৎ কিশোরগঞ্জের ইটনার মৃত রসময় চন্দ্র গোপ ও উত্তরা রানী গোপের ছেলে। আর নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের পতিত পাবন গোপ ও অঞ্জলি রানী গোপের ছেলে অসীত।
রাজধানীর ভাটারার নুরের চালা এলাকা থেকে জিতেশকে এবং জগন্নাথপুর পৌর এলাকা থেকে অনজিৎ ও অসীতকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে ব্রিফিংয়ে জানায় সিআইডি।
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের আবদুল মতিন মার্কেটের অভি মেডিকেল হল নামে একটি ওষুধের দোকান থেকে বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) শাহনাজ পারভীন জোৎস্নার ছয় টুকরো লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের নারিকেলতলা গ্রামের সৌদি প্রবাসী ছুরুক মিয়ার স্ত্রী। লাশ উদ্ধারের দিনই জিতেশ চন্দ্র গোপের নাম উল্লেখ করে জগন্নাথপুর থানায় মামলা করেন জোৎস্নার ভাই হেলাল আহমেদ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করেছেন, ১০ বছর ধরে জগন্নাথপুর পৌর এলাকায় নিজ বাড়িতে দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন জোৎস্না। তার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে সৌদি প্রবাসী। সবসময় জিতেশের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কেনার সুবাদে জিতেশের সঙ্গে জোৎস্নার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে।
সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে জিতেশ জানিয়েছে, ভুক্তভোগী কিছুদিন ধরে গোপনীয় শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। এ জন্য সেদিন বিকেলে জিতেশের ফার্মেসিতে এলে জোৎস্নাকে ফার্মেসির ভেতরে প্রাথমিক চিকিৎসাকক্ষে বসিয়ে রাখা হয় ভিড় কমলে তার সঙ্গে কথা বলে ওষুধ দেওয়া হবে বলে।
সিআইডিকে জিতেশ আরও জানায়, তার বন্ধু মুদি দোকানদার অনজিৎ এবং পাশের অরূপ ফার্মেসির মালিক অসীতকে ফার্মেসিতে বসিয়ে রাখা জোৎস্নার কথা বললে তারা তাকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করেন। এরপর জিতেশ জোৎস্নাকে চিকিৎসার কথা বলে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ফার্মেসির ভেতর ঘুম পাড়িয়ে রেখে তালা দিয়ে চলে যান।
আশেপাশের দোকানপাট বন্ধ হলে গভীর রাতে তারা তালাবদ্ধ ফার্মেসি খুলে ভেতরে ঢুকে এনার্জি ড্রিংকস পান করে জোৎস্নাকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের বিষয়টি জোৎস্না প্রকাশ করার কথা বললে আসামিরা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বলে সিআইডি জানায়।
ভুক্তভোগীর পরনের ওড়না গলায় পেঁচিয়ে, বিশ্রামকক্ষে থাকা বালিশ দিয়ে মুখে চেপে ধরে হত্যা করার কথা সিআইডিকে জানায় তারা।
সিআইডি জানিয়েছে, এরপর লাশ গুমের জন্য ধারালো ছুরি দিয়ে মাথা, দুই হাত, দুই পা এবং বুকপেটসহ ছয়টি অংশে বিভক্ত করে তারা। সুবিধাজনক সময়ে লাশের খণ্ডিত অংশগুলো মাছের খামারে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের।