বাঙালি যখনই এগিয়ে যেতে থাকে, তখনই ষড়যন্ত্র শুরু হয় : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফাইল ছবি

বাঙালি যখনই কিছু পায়, এগিয়ে যেতে থাকে মর্যাদা পাওয়ার দিকে, তখনই চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শুরু হয় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, একটা শ্রেণি আছে যারা আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে চায় না। তারা আত্মমর্যাদা বিকিয়েই আত্মতুষ্টিতে থাকতে চায়। সমাজের সেই শ্রেণি দেশের উন্নয়ন দেখতে পায় না এবং স্বীকারও করে না।

শহীদ দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, এশিয়ার অনেক দেশের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন ভাষা আছে। কিন্তু বাঙালির মূল ভাষা একটাই। আমরা একটা জাতি, একটা ভাষা। সেটা বাংলা। আমাদের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য কিছু ভাষা আছে। সেটা কিন্তু ওই রকম ব্যাপক না। সেটা এতটাই ক্ষুদ্র যে অনেকের বর্ণমালাও নেই। তবুও আমরা সেগুলো খুঁজে বের করছি।

তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৩ সালে প্রথম শহীদ দিবস পালন করেন। তিনি খালি পায়ে মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে যাওয়া, আজীমপুর কবরস্থানে যাওয়া, শহীদদের প্রতি সম্মান জানানো শুরু করেছিলেন। সেটা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হয়েছিল।

‘সমাজে আগাছা থাকবেই, তাদের কী করে সরাতে হবে, তা বাঙালিকেই ভাবতে হবে।’

ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে বারবার কারাবন্দি হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। কারাগারে বন্দি থেকেও বঙ্গবন্ধু নিশ্চুপ থাকেননি। তিনি যোগাযোগ রক্ষা করে গেছেন। যখনই মুক্তি পেয়েছেন তিনি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছেন এবং জনতাকে বিশেষ করে সংগঠিত করেছেন। ভাষা আন্দোলনের জন্য ছাত্রদের নিয়ে তিনি বিভিন্ন জায়গায় গোপন বৈঠক করেন। তৎকালীন ইন্টিলিজেন্স ব্রাঞ্চের রিপোর্টে বঙ্গবন্ধুর নামে রিপোর্ট এসেছে, তিনি ছাত্রদের উস্কে দিচ্ছেন।

পাকিস্তানিরা বাংলা বর্ণমালার বিরোধী ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি শাসকরা বলেছিল, উর্দু বর্ণমালায়, ল্যাটিন বর্ণমালায় বাংলা লিখতে হবে। অথচ আমাদের নিজস্ব সমৃদ্ধ বর্ণমালা আছে।

সরকারপ্রধান বলেন, দেশের একটি শ্রেণি সেই অতীতকাল থেকেই পরাধীন হয়ে থাকতে চায়। এদেশেই একটি শ্রেণি আছে যারা আত্মমর্যাদা নিয়ে চলতে জানে না। তারা আত্মমর্যাদা বিকিয়ে দিয়েই টিকে থাকতে চায়। তারা পরাধীন হয়ে থাকতে পছন্দ করে। এদেশের গৌরব, সমৃদ্ধি, উন্নয়ন তারা চোখে দেখে না। আমার অবাক লাগে তাদের চিন্তাধারা দেখে।

বঙ্গবন্ধুর লেখা থেকে উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলতেন, ‘বাংলাদেশের মাটি উর্বর এখানে ফসলের সঙ্গে পরগাছাও জন্মায়।’ তাই এগুলো নিয়ে চিন্তা করি না। এগুলো থাকবেই।

বাঙালির ইতিহাস রক্তের আর আত্মত্যাগের ইতিহাস উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রক্তদান কখনো বৃথা যায় না। আমরা তা প্রমাণ করেছি। রক্তদানের মাধ্যমেই আমরা আমাদের ভাষার অধিকার ও স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে আপনারা দেখবেন, বঙ্গবন্ধু শুধু বন্দি নয়, কারাগারের বাইরে থেকেও অনেক জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছেন। ভাষা আন্দোলনের সম্পৃক্ত থেকে প্রকাশ্যে-গোপনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ক্রমান্বয়ে আরও আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ছয় দফা অতঃপর একাত্তরের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু আজীবন ঝুঁকি নিয়েছেন বাংলার মানুষের জন্য। বাঙালির জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন তিনি।

মানুষের মনের কথা বুঝতে পারতেন বঙ্গবন্ধু উল্লেখ করে তিনি বলেন, সত্তরের নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন, মাত্র দুটি আসনে আমরা জিততে পারবো না। নির্বাচনের পর দেখা যায় তিনি মাত্র দুইটি আসন বাকি রেখে আর সব আসনেই জয়লাভ করেছেন। সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তিনি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলেছিলেন। স্বাধীন দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু বাংলাকে খুব ভালোভাবে জানতেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সত্তরের নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন, মাত্র দুটো সিটে জিততে পারবো না। এটা বলতে পেরেছিলেন। এরপর তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেন ঠিকই, কিন্তু তাকে ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। এরপর ৭ মার্চের ভাষণ। সেটি আজ প্রামাণ্য দলিলের স্বীকৃতি পেয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে নিয়ে আমাদের তিনি স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুললেন। তারপরই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট। এই ঘটনার পরপরই আমাদের সংস্কৃতির ওপর আঘাত আসে। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নাম, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা আন্দোলনের কথাও মুছে ফেলা হয়। কিন্তু জাতির পিতা বলেছিলেন, ‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ কেউ পারেনি। বাঙালি মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে গেছে। সেটা দিয়ে গেছেন জাতির পিতা শেখ মুজিব। মনে রাখবেন, কোনো সংগ্রাম বৃথা যেতে পারে না।

বাঙালি প্রবল আত্মসম্মান সম্পন্ন জাতি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই বাঙালি মাথা উঁচু করে বাঁচবে। এসময় নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়, মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন