ইউক্রেনের সময় বৃহম্পিতবার ভোর ৫টায় বিকট একটা বোমার শব্দে ঘুম ভাঙে মারিয়োপোল শহরে বাংলাদেশি ছাত্র আহমেদ ফাতেমি রুমির। শহরের বিভিন্ন দিক থেকে আনুমানিক আটটি বা দশটি হামলা হয়েছে বলে তারা শুনেছেন। মাত্র দুই মাস আগে বাংলাদেশ থেকে সেখানে মারিয়োপোল স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতি পড়তে যান রুমি।
তারা ভয়ের মধ্যে আছেন বলে জানিয়ে রুমি বলেন, ইউক্রেন সরকার আইন জারি করে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। ফলে ইচ্ছা করলেও আমি এখান থেকে মুভ করতে পারছি না’।
বাজার দোকান, শপিংমল আর ব্যাংকে মানুষের প্রচুর ভিড় এবং আতঙ্কিত মানুষ মজুত করার জন্য শুকনো খাবার কিনতে শুরু করেছে বলে জানান তিনি। তবে রাস্তাঘাটে অন্য সময়ের তুলনায় মানুষ অনেক কম বলে তিনি জানান।
‘প্রতিটা এটিএম বুথের সামনে কম করে হলেও ৬০ থেকে ১০০ জন মানুষ লাইন দিয়ে আছে এবং টাকা তুলছে।’
আহমেদ ফাতেমি রুমি জানান তার বিশ্ববিদ্যালয় সকাল ১০টার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
তিনি মারিয়োপোল ছেড়ে নিরাপদ কোনো শহরে যাবার জন্য রেল স্টেশন ও বাসস্টপে দৌড়াদৌড়ি করছেন সকাল থেকে। কিন্তু শহর ছাড়তে তিনি এখনো সফল হননি বলে জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ে দশ থেকে ১২জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন বলে তিনি জানান।
এদিকে ইউক্রেনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ডে ঢোকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারসতে বাংলাদেশের দূতাবাস ইউক্রেনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সাথে যোগাযোগ রাখছে। দূতাবাসের পক্ষ থেকে হোয়াটঅ্যাপে গ্রুপ করে গতকাল প্রায় তিনশর মতো বাংলাদেশির সাথে বৈঠক করা হয়েছে। ইউক্রেনে থেকে বাংলাদেশিদের পোল্যান্ডে নিয়ে এসে আপাতত আশ্রয় দিতে আমরা নির্দেশ দিয়েছি। সেখানে থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি জানান, ইউক্রেনে বসবাসরত বিদেশিদের ১৫ দিনের জন্য সাময়িক ট্রানজিট ভিসা দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে পোল্যান্ড। ‘আজ বা কালকের মধ্যে পোল্যান্ড তাদের সিদ্ধান্ত কার্যকর করবে বলে আশা করছি। তারপর বাংলাদেশিরা পোল্যান্ডে ঢুকতে পারবেন।’
তিনি জানান, ওয়ারসতে বাংলাদেশের দূতাবাসের পক্ষ থেকে অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইউক্রেনে হাজারখানেক বাংলাদেশি রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী।
ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযান নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সবসময় সংলাপ এবং কূটনীতির মাধ্যমে সংকট সমাধানের নীতিতে বিশ্বাসী। দুঃখজনকভাবে পরিস্থিতি গুরুতর রূপ নিয়েছে। শান্তির পথে যেসব সমস্যা রয়েছে আলোচনার মাধ্যমে তার সুরাহা প্রয়োজন। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে সেই সংলাপের পথে যাওয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।
এই যুদ্ধ বাংলাদেশের ওপর কী প্রভাব ফেলবে- এই প্রশ্নে শাহরিয়ার আলম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা