আর্ন্তজাতিক সব আইন ও চুক্তি অমান্য করে ইউক্রেনে রাশিয়ার চালানো আগ্রাসন কেন্দ্র করে বৈশ্বিক দুটি শক্তি দুই অবস্থানে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। অন্য দেশগুলো আছে দুইশক্তির কোনো শিবিরে, না হয় ‘নিরপেক্ষ’। কোনো পক্ষে না গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সকারের এখনো পর্যন্ত চিন্তাভাবনা ‘ভারসাম্যমূলক’ কূটনৈতিক অবস্থানে থাকা। রাশিয়ার হামলার বিষয়ে সরকার তাই ‘পর্যবেক্ষণ’ করছে।
ইউক্রেনের নিরস্ত্র, বেসমাররিক মানুষকে রাশিয়ার দখলদার বাহিনীর হত্যা করার বিষয়ে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এখনো পর্যন্ত কোনো বক্তব্য দেয়নি। রাজনীতির মাঠে প্রধান সরকারবিরোধি দল বিএনপির মুখেও এ বিষয়ে কোনো শব্দ নেই। সংসদের বিরোধিদল জাতীয় পার্টির মুখেও ‘কুলুপ আটা’। তবে সবচেয়ে ‘রহস্যজনক ভূমিকা’ নিয়েছে বাম রাজনৈতিক দলগুলো। ‘আধিপত্যবাদী দেশগুলোর আগ্রাসন বিরোধিতা ও কোনো রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার’ প্রশ্নে দলগুলো অন্য সময় ‘সক্রিয়’ থাকলেও রাশিয়ার হামলার বিষয়ে চুপ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের কোনো দেশে রাশিয়া এই প্রথম এতো বড় আগ্রাসন চালালেও বামদলগুলো নিরব।
খোঁজ নিলে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘পতনের’ আগে থেকে এ দেশের বামদলগুলো দুটি ধারায় বিভক্ত। রাশিয়াপন্থি ও চীনপন্থি। ইউক্রেনে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। চীন ‘সমর্থন’ করছে রাশিয়াকে। বামদলগুলো নিরব থাকার এটাও একটা কারণ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনটি বামদলের তিনজন শীর্ষ নেতা মত ও পথকে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বে জোটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে থাকার পরিকল্পনা আছে কয়েকটি বামদলের। এসব দল ইউক্রেনে হামলার বিষয়ে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়ার দিকে নজর রাখছে।
জানা যায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের ১৪ দলীয় জোট ও গণতান্ত্রিক বামজোটসহ মোট ছয়টি জোটে শরিক হয়ে আছে বামদলগুলো। এসব দল বিভিন্ন ইস্যুতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ‘সক্রিয়’ হয়। বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায় মোট ৩৫টি বামদলকে। সেগুলোর মধ্যে ইসিতে নিবন্ধন আছে ১০টি দলের।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হামলা বন্ধের দাবি জানিয়েছে ‘বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি’। দলটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার আগ্রাসী তৎপরতা স্বাধীন দেশগুলোর সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি। এ হামলা পূর্ব ইউরোপে মার্কিন নেতৃত্বের সাম্রাজ্যবাদী ন্যাটো জোটের তৎপরতাকে আরো বিস্তৃত করার ক্ষেত্র তৈরি করবে। যা রাশিয়াসহ গোটা ইউরোপের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে।’
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্কসবাদী) ‘বিশেষ সাংগঠনিক সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি’র আহ্বান মানস নন্দী, সদস্য সচিব মাসুদ রানা এক বিবৃতিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে দুনিয়ার দেশে দেশে যুদ্ধ ও অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য দায়ি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো তৎপর হয়ে উঠেছে।’