নভেম্বর ২৩, ২০২৪, শনিবার, ৯:৪৫ পূর্বাহ্ন
হোমবিশেষ কলামযে কারণে পশ্চিমারা সব সময় পুতিনের কাছে হেরে যায়

যে কারণে পশ্চিমারা সব সময় পুতিনের কাছে হেরে যায়

সাইমন টিসডাল

ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে যে কোনো দ্বন্দ্বে পশ্চিমারা সব সময় এক হাত পেছনে বেঁধে লড়াই করে। ভয়, লোভ আর অনীহা থেকে পশ্চিম এটা ইচ্ছা করেই করে। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এ অবস্থা চলছে। বর্তমানে ইউক্রেনেও একই চিত্র। আর এ কারণেই পশ্চিম হেরে যায়।

পশ্চিম কখনোই পুতিনের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। এই সুযোগে একের পর এক ‘কাণ্ড ‘ ঘটিয়েছেন রাশিয়ার এই প্রেসিডেন্ট। তার বিরুদ্ধে আলেকজান্ডার লিটভিনেঙ্কোকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে, তিনি জর্জিয়া আক্রমণ করেছেন, দিনের পর দিন সিরিয়ার যুদ্ধাপরাধে মদদ দিয়ে গেছেন, ক্রিমিয়াকে ছিনিয়ে নিয়েছেন, লিবিয়ায় ভাড়াটে পাঠিয়েছেন, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে নস্যাৎ করতে সাইবার আক্রমণ করেছেন, ইন্টারনেট দুনিয়া বিষিয়ে তুলেছেন এবং এভাবে চলছেই। এরপরও পশ্চিম নিশ্চুপ ও অকার্যকর।

পশ্চিমের রাজনীতিবিদ আর ব্যবসায়ীরা পুতিনকে বেশ ভালোভাবেই জানেন। তারা পুতিনের শাসন সম্পর্কেও ওয়াকিবহাল। এরপরও তারা এমন ভান করেন যেন সবকিছু স্বাভাবিক। এবার যেভাবে ইউক্রেনে হামলা হয়েছে, এই ধরন নতুন নয়। এটি অতীতের পুনরাবৃত্তি মাত্র। রাশিয়া যে ইউরোপের জন্য হুমকি, এই সত্য পশ্চিমারা ১৯৪৫ সালেই বুঝতে পেরেছিল। এরপরও তারা সব সময় হাত গুটিয়ে রেখেছে এবং শুধু নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আনন্দে বগল বাজিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা যখন সামনে এলো, তখন আসলেই অনেক দেরি হয়ে গেছে। আর এ কারণেই পশ্চিম হেরে যায়।

অতীত অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও ইউক্রেন সংকটের পর পশ্চিম আবার রক্ষণাত্মক অবস্থানে চলে গেছে। অথচ এখনই তাদের জোরালো ভূমিকা রাখা উচিত ছিল। তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই, পুতিন সত্যিই ‘অযৌক্তিক’ ও ‘বিরক্তিকর’ হয়ে উঠেছেন, তাহলে পশ্চিমাদের সামনে শুধু একটি পথই খোলা আছে। এমন আগ্রাসন ঠেকাতে ব্যর্থ হলে মস্কোতে অবশ্যই শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে। পুতিনকে সিংহাসন থেকে উৎখাত করতে হবে। এই একটি পদক্ষেপই ইউক্রেনকে, বিশ্বব্যবস্থাকে এবং সর্বোপরি রাশিয়াকে বাঁচাতে পারে। পশ্চিমের উচিত প্রকাশ্যে সেসব রাশিয়ানকে সাহায্য করা যারা তাদের দেশে নতুন নেতৃত্ব চায়। পুতিনকে একদম নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কেন রাশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা আলেক্সি নাভালনির মুক্তির দাবি করছেন না? পুতিনের বিরুদ্ধে তিনিই সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি। যোগ্য বলেই ২০২০ সালে পুতিন তাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল এবং এখন জেলে বন্দি করে রেখেছে। কেন তাকে কেন্দ্র করে পশ্চিমারা রাশিয়ায় একটি নতুন ও অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন না? পশ্চিমা নেতাদের উচিত পুতিনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার জনগণকে সোচ্চার করে তোলা। জনগণকে পুতিনের পুলিশি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বলা। কিন্তু পশ্চিমা নেতারা কি তা করবেন? অসম্ভব। এই নেতারা একজন ‘অপ্রতিরোধ্য জারের’ কাছ থেকে হুমকির ভয় করেন। তারা তাকে রাগিয়ে দিতে ভয় পান। একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের শঙ্কায়, ভবিষ্যৎ সংঘর্ষ এড়াতে এবং সর্বোপরি একটি অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হওয়ায় তারা পুতিনকে রাশিয়ার রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ করার সাহস করেন না। ফলস্বরূপ দিনের পর দিন তারা পুতিনকে সহ্য করছেন। আর এ কারণেই পশ্চিম হেরে যায়। পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়া পুতিনের অক্ষমতা সম্পর্কে গভীরভাবে সচেতন। আর এ কারণে তারা গত সপ্তাহে ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য করে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এটা অবশ্যই করা উচিত। এর পাশাপাশি মস্কোতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার, রাশিয়ার সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন এবং রাশিয়ার তেল-গ্যাস রপ্তানিসহ অন্যান্য বাণিজ্য ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি তোলা উচিত। কেন এখনও এসব করা হয়নি? সম্ভবত এসব কখনোই করা হবে না। আসলে এমন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ এর পেছনে দায়ী রাশিয়ার অর্থ। আর এ কারণেই পশ্চিম হেরে যায়।

পুতিনকে থামানোর কি আর কোনো পথ নেই? অবশ্যই আছে। তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করুন। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হোক। তার বন্ধু স্বৈরশাসক চীনের শি জিনপিংকে তার জামিন হতে বলুন। পুতিনকে একজন আন্তর্জাতিক অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করুন। এ ছাড়া ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীকে অস্ত্র ও সাহায্য সরবরাহ করে তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করুন। পুতিনের জন্য বিশ্ব এত বিপর্যয় ও দুর্দশা সইতে পারে না। তার পতন বিশ্বের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসবে। তবে এটাও নিশ্চিত, খুব সহসা এমনটি ঘটবে না। পুতিন বেঁচে থাকবেন, এমনকি অগণিত লোকের মৃত্যু হলেও। কারণ আমরা তাকে এই সুযোগ দিয়েছি। পশ্চিম তাকে এই সুযোগ করে দিয়েছে। আর এ কারণেই পশ্চিম হেরে যায়।

সাইমন টিসডাল : দ্য গার্ডিয়ানের যুক্তরাষ্ট্র সম্পাদক
(ঈষৎ সংক্ষেপে ভাষান্তর সাইফ বিন আইয়ুব)

এর মাধ্যমেস ফা