বর্তমানে উন্নত দেশসমূহ মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিমা ব্যবস্থাকে বেছে নিয়েছে। টেকসই অর্থনীতিতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য বিমা জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ২০২১ সালে বিশ্বে বিমাখাতে মোট প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ছিল ৬ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে এখাতে ২০২১ সালে বাংলাদেশে মোট প্রিমিয়াম আয় ছিল এক দশমিক ৭১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০০৮ হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রিমিয়াম আয় ১৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও বাংলাদেশে বিমা পেনিট্রেশন মাত্র শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ।
মঙ্গলবার (১ মার্চ) ‘জাতীয় বিমা দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিমার পেনিট্রেশন বৃদ্ধিতে গ্রাহকদের প্রতি বিমা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিশ্রুতির যথাযথ পরিপালন আবশ্যিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাহকদের প্রয়োজন অনুযায়ী উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে বিমাপণ্য বাজারজাত করতে হবে। সরকারি ভাতা সহায়তা বা ভর্তুকির চেয়ে মানুষের জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি বা আপদকালীন সময়ে বিমা অধিক কার্যকর বিকল্প হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিমা পেশায় যোগদানের স্মৃতি বিজড়িত ১ মার্চ ‘জাতীয় বিমা দিবস’ পালন হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এবারের বিমা দিবসের প্রতিপাদ্য ‘বিমায় সুরক্ষিত থাকলে, এগিয়ে যাবো সবাই মিলে’ যথার্থ হয়েছে বলে আমি মনে করি।
তিনি বলেন, জাতীয় অর্থনীতিতে বিমার গুরুত্ব এবং এর অবদানের বিষয়টি বিবেচনা করে স্বাধীনতার পর বিমা শিল্পকে অধিকতর অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এ লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর সরকার ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স (জাতীয়করণ) আদেশ-১৯৭২ জারি করে। পরে ৪৯টি দেশি-বিদেশি বিমা কোম্পানিকে জাতীয়করণের মাধ্যমে সুরমা, রূপসা, তিস্তা এবং কর্ণফুলি নামক চারটি বিমা করপোরেশন গঠন করা হয়। একই সঙ্গে এই চারটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে জাতীয় বিমা করপোরেশন গঠন করেন বঙ্গবন্ধু। পরবর্তীতে অল্প সময়ের মধ্যে দেশের বিমা শিল্পের উন্নয়নে ‘ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন আইন-১৯৭৩’ প্রণয়ন করে এই চারটি করপোরেশনকে ভেঙে ‘জীবন বিমা করপোরেশন এবং সাধারণ বিমা কর্পোরেশন’ নামে দুটি পৃথক বিমা করপোরেশন গঠন করেন। এ দুটি করপোরেশন এখনও দেশে বিমা ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে দেশের জনগণকে বিমা সেবা দিয়ে আসছে। বিমা প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিমা অধিদপ্তর গঠন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমা শিল্পের উন্নয়নের জাতির পিতার দেখানো পথ অনুসরণ করে ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার বিমার গুরুত্ব ও সুফল জনগণের নিকট পৌঁছানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। পুরাতন বিমা আইন-১৯৩৮ কে রহিত করে সময়োপযোগী ‘বিমা আইন-২০১০’ এবং ‘বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন-২০১০’ প্রণয়ন পূর্বক তৎকালীন বিমা অধিদপ্তরকে বিলুপ্ত করে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়। ‘জাতীয় বিমা নীতি-২০১৪’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিমা খাতের বিকাশে আমাদের সরকার যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য প্রবাসী কর্মী বিমা, বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি মোকাবিলায় হাওড় এলাকায় সীমিত পরিসরে আবহাওয়া সূচক ভিত্তিক শস্য বিমা চালু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিমা গ্রাহকদের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে স্টেট অব দ্যা আর্ট টেকনোলজি সম্পন্ন ইউনিফায়েড মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম (এইএমপি) পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মতো বৃহৎ প্রকল্পগুলোর বিমা ঝুঁকি আবরণ ও পুনঃবিমা করা হয়েছে। এভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাধারণ বিমা করপোরেশন বিশেষ অবদান রাখছে। পাশাপাশি বিমার প্রসার এবং বিমা শিল্পে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, টেকসই বিমা শিল্পের স্বার্থে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিমা প্রতিষ্ঠানসমূহকে আরও সচেতন হতে হবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় বিমা সেবা পৌঁছে দিতে হবে। পাশাপাশি প্রচলিত বিপণন পদ্ধতিতে আধুনিকতার সমন্বয় ঘটাতে হবে। সর্বোপরি বিমার যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে তা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও বেগবান হবে বলে আমি আশা করি।
জাতির পিতার জন্মশতবর্ষে তার স্মৃতি বিজড়িত আজকের এই দিনে বিমার শুভবার্তা দেশের সব নাগরিকের নিকট পৌঁছে যাক। দেশের সব মানুষ এবং সম্পদ বিমা সেবার আওতায় আসুক- এই প্রত্যাশায় জাতীয় বিমা দিবস ২০২২-এর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।