গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতি অসাধারণ মমত্ববোধের কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। রাষ্ট্রপিতা (ফাউন্ডিং ফাদার অব দ্য নেশন) ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু একসময় বিমা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। বাংলাদেশের স্থপতি নায়ক ছিলেন বিমা কর্মকর্তা। রাজনীতির বাইরে এটাই ছিল তাঁর প্রথম, একমাত্র ও শেষ চাকরি।
পাক সামরিক শাসক আইয়ুব খানের সামরিক শাসন চলছে। তার ঘোষিত সামরিক আইনে ১৯৫৮ সাল থেকে রাজনীতি নিষিদ্ধ। বঙ্গবন্ধু আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ। জনগণের খবর না রাখা তাঁর পক্ষে সম্ভব ছিল না। রাজনীতির চাকা সচল রাখা, মানুষকে সহায়তা করা, তাদের পাশে দাঁড়ানো, বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি তখন বিমা প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব নেন। তাঁর এ সিদ্ধান্তে ছিল বিচক্ষণতা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা।
ইতিহাস গবেষকরা বলেন, বিমা পেশার কার্যক্রম সংগঠনভিত্তিক ও জনসম্পৃক্ত। এতে যুক্ত থেকে মানুষের সঙ্গে যোগােযাগ রাখা সম্ভব। রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধু মূলত এ চাকরি নেন। আইয়ুব খান রাজনীতি চর্চা নিষিদ্ধ করে রাখায় বিমা প্রতিষ্ঠানে চাকরির পাশাপাশি জনগণের অধিকার আদায় ও তাদেরকে সংঘবদ্ধ করেন বঙ্গবন্ধু। কোম্পানির কাজের নাম করে তিনি সারাদেশে ভ্রমণ করে নিরবে নিভৃতে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে সংহত ও বেগবান করেন।
সেবাধর্মী এ পেশার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু তখন জনগণকে সঞ্চয়মুখি করার প্রয়াসে পুঁজি সৃষ্টি করে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকেও তিনি এ পেশার সঙ্গে যুক্ত করে কর্মসংস্থনের সুব্যবস্থা করেন।
যাঁর সাহসী ও আপসহীন নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত হয়েই পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে একাত্তরে স্বাধীনতাসংগ্রামে পরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালি জাতি, সেই বঙ্গবন্ধু ‘ ইন্স্যুরেন্স কন্ট্রোলার’ হিসেবে পাকিস্তানের আলফা ইন্স্যুরেন্সে চাকরি নেন। ১৯৬০ সালের ১ মার্চ তিনি চাকরিতে যোগ দেন। তখন তাঁর কার্যালয় ছিল ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে।
বিমা খাতে বঙ্গবন্ধুর অবদান শুরু থেকেই। মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের ভঙ্গুর অর্থনীতি পূর্ণগঠনের পাশাপাশি তিনি বিমা শিল্পের জন্য অবদান রাখেন। জীবন বিমার সুফল দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালে তাঁর সরকার বিমা শিল্প জাতীয়করণ করে। জাতীয়করণের পর জীবন বিমা ব্যবসায় নিয়োজিত ৩৭ টি কোম্পানির সম্পদ ও দায়-দেনা নিয়ে প্রথমে সুরমা ও রূপসা নামে দুটি কর্পোরেশন করে সরকার। কর্পোরেশনগুলোর সমন্বয়ে জাতির পিতা ১৯৭৩ সালে জীবন বিমা কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জীবন বিমা কর্পোরেশন এর ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম দ্বারা অভ্যন্তরীণ পুঁজি সংগ্রহ ও জনসাধারণের সচেতনতা বাড়াতে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে আসছে।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত বিমা পেশা। আলফা ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে তাঁর যোগদানের দিন ১ মার্চ সরকার প্রতিবছর ‘জাতীয় বিমা দিবস’ হিসেবে উদযাপন করে। আজ জাতীয় বিমা দিবস, এর এবারের প্রতিপাদ্য ‘বিমায় সুরক্ষিত থাকলে, এগিয়ে যাব সবাই মিলে’। জাতির পিতার যোগদানের তারিখকে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ করে রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০২০ সালের ১ মার্চ ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুর তনয়া শেখ হাসিনা জাতীয় বিমা দিবসের কথা ঘোষণা করেন। কালের মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর স্মরণে এ দিবসকে ‘বি’ ক্যাটাগরি থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করে সরকার।
আগামীকাল পড়ুন- বঙ্গবন্ধুর লেখায় যেভাবে এসেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া