দলে দলে নতুন নেতৃত্ব!

হাসান শান্তনু

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ঘর গুছাচ্ছে। দলগুলোর শীর্ষপদে আসছে নতুন নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে মহানগর হয়ে তৃণমূল- সবখানে কম-বেশি নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব পাচ্ছে। ছোট-বড় প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে যেন লেগেছে ‘আগাম নির্বাচনী হাওয়া’। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, প্রধান সরকারবিরোধি দল বিএনপি, সংসদের বিরোধিদল জাতীয় পার্টিসহ (জাপা) ডান ও বাম দলগুলো নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে। একাধিক দলে ইতোমধ্যে নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব পেয়েছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির মহাসচিব পদে চলতি বছর নতুন নেতৃত্ব আসতে পারে বলে জোর গুঞ্জন আছে। দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলে ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ হিসেবে আছেন যথাক্রমে ওবায়দুল কাদের ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনে তাঁদের শেষ বছর হতে পারে এবার। আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই দলই কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব সামনে এনে দল গুছানোর পরিকল্পনা করছে। দুই দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র মত ও পথকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

universel cardiac hospital

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির মহাসচিবের রাজনৈতিক অবস্থান দুটি বিপরিত মেরুতে। কাকতালীয়ভাবে দুজনকে দলের ‘দ্বিতীয় প্রধান নেতা’র পদের দায়িত্ব ছাড়তে হতে পারে একই বছর। তাঁদের সাফল্য ও ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশ নিয়ে দুইদলের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা বিশ্লেষণ আছে। দুইনেতার পারিবারিক, রাজনৈতিক ঐতিহ্যের মিল ও অমিল নিয়েও আলোচনা আছে।

দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাদের দ্বিতীয় মেয়াদ পার করছেন। ২০১১ সালে বিএনপির মহাসচিব খন্দকার দেলাওয়ার হোসেনের মৃত্যুর চারদিন পর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ‘ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের’ দায়িত্ব দেন মির্জা ফখরুলকে। টানা পাঁচ বছর তিনি ‘ভারযুক্ত’ পদে থেকে ২০১৬ সালে দলের পূর্ণ মহাসচিবের দায়িত্ব পান। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে তাঁর নেতৃত্ব বিরোধি কয়েকজন সক্রিয় আছেন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ আছে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দলটির কেন্দ্রীয় সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত আছে। চলতি বছরের কখন বিএনপির কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আয়োজন হতে পারে, এ বিষয়ে দলটির এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দলটির সারাদেশে অগোছালো তৃণমূলের সম্মেলনের বিষয়েও এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে আগেভাগে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছে আওয়ামী লীগ। টানা তৃতীয়বার সরকারে থাকা এ দল তৃণমূলের সম্মেলনের মাধ্যমে জনপ্রিয় ও নতুন নেতৃত্বকে দায়িত্ব দেওয়ার পরিকল্পনায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সাংগঠনিক বিষয়গুলোর উপর জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে। দেশজুড়ে দলটির তৃণমূল সম্মেলনের আয়েজনের প্রস্তুতি চলছে। এসব সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব আসছে বলে জানা যায়। সৎ, জনপ্রিয় ও পরীক্ষিত নেতারাও দায়িত্বে থাকবেন।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বের জোটভুক্ত কয়েকটি দলের শীর্ষপদে এবার নতুন নেতা দেখা যেতে পারে। তবে কয়েকটি দলে বর্তমান নেতৃত্বই শীর্ষপদে থাকছেন বলে আভাস পাওয়া গেছে। গণফোরাম (মন্টু), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার, গণঅধিকার পরিষদের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।

অন্যদিকে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিতে (সিপিবি) এসেছে নতুন নেতৃত্ব। সভাপতি পদে মোহাম্মদ শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক পদে রুহিন হোসেন প্রিন্স নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগের কমিটিতে শাহ আলম সাধারণ সম্পাদক, প্রিন্স সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চারদিনের কংগ্রেসে শেষ হওয়ার পর ১ মার্চ সকালে সিপিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ওই দিন নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যরা বৈঠক করে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করেন।

২০১২ সালের অক্টোবরে দশম কংগ্রেসে সিপিবির সভাপতির দায়িত্বে আসেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তাঁর সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছিলেন সৈয়দ আবু জাফর আহমদ। এরপর ২০১৬ সালের অক্টোবরে একাদশ কংগ্রেসেও সেলিম ও আবু জাফর আহমদ নেতৃত্বে রেখে সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটি হয়। পরে জাফর মারা গেলে পার্টির সাধারণ সম্পাদক হন শাহ আলম।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়েছে চলতি মাসেই। এতে বজলুর রশীদ ফিরোজকে দলের নতুন সাধারণ সম্পাদক করে ১৪ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ফিরোজ দলের বিদায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।

শেয়ার করুন