ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ২৮ মে

মোহাম্মদ সজিবুল হুদা

প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। ছবি- মত ও পথ
  • ১৫ মে’র মধ্যে ছয় উপজেলার সম্মেলন সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত
  • আগামী ৫০ বছরেও বিএনপির ক্ষমতায় আসার সুযোগ নেই : হানিফ

আগামী ২৮ শে মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। এরআগে ১৫ ই মে’র মধ্যে মেয়াদোর্ত্তীর্ণ কসবা, আখাউড়া, নবীনগর, নাসিরনগর, আশুগঞ্জ ও সরাইল উপজেলার সম্মেলন সম্পন্ন করারও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ০৫ মার্চ (শনিবার ) জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।

এদিন জেলা শহরের দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গণে সকাল ১১টা থেকে শুরু হওয়া বিশেষ বর্ধিত সভা চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। উপজেলা সম্মেলনগুলো ওয়ার্ড থেকে সম্পন্ন করার জন্য জেলা কমিটির নেতাদের সমন্বয়ে সাংগঠনিক টীমও গঠন করে দেয়া হয়।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিএনপির আগামী ৫০ বছরেও রাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসার কোনো সুযোগ নেই। তাই তারা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি অপচেষ্টা করছে। সরকার এ ব্যাপারে সজাগ ও সতর্ক রয়েছে। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদেরও সতর্ক থাকতে হবে, তাদের অপতৎপরতা মোকাবেলা করতে হবে। বিশেষ করে বিএনপির মিথ্যাচারে জনগণ যেন বিভ্রান্ত না হয়, সেজন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভূমিকা রাখতে হবে। জনগণের কাছে আমাদের উন্নয়ন-অগ্রগতির কথা এবং চিত্রগুলো তুলে ধরতে হবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে- এই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য শেখ হাসিনার বিকল্প কেউ নেই; সেটি বলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি বিরোধী দলে থাকাবস্থায় ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করে জনগণের ওপর বারবার আক্রমণ করেছে। যার ফলে তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই জনবিচ্ছিন্নতার কারণেই তারা দিশাহারা হয়ে সকালে এক কথা আবার বিকেলে আরেক কথা বলে। নানা ধরনের মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায়। তাদের লক্ষ্য একটাই- দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করা। কারণ তারা জানে, উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা যদি অব্যাহত থাকে; এ দেশের জনগণ সবসময় শেখ হাসিনার প্রতি আস্থাশীল থাকবে।

নতুন নির্বাচন কমিশন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, বিএনপির এখন নতুন ইস্যু হল নির্বাচন কমিশন। তারা যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তাদের প্রধানমন্ত্রী তালিকা দিয়েছে আর রাষ্ট্রপতি গ্যাজেট করে পাঠিয়ে দিয়েছে। এটি ছিল তাদের নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে নির্বাচন কমিশন গঠনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ পন্থা অবলম্বন করেছেন। রাষ্ট্রপতি সব দলের সাথে সংলাপের মাধ্যমে পরামর্শ করে তাদের দেওয়া নামের ভিত্তিতে সার্চ কমিটি গঠন করে; সার্চ কমিটির নামগুলো যাচাই-বাছাই করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। এটাই ছিল গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সবচেয়ে উত্তম পন্থা।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মানবিকতার উন্নত পরিচয় দিয়ে তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দিয়েছেন। অথচ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়েও তারা মিথ্যাচার করেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপির সভাপতিত্বে বিশেষ বর্ধিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয় সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য বি. এম. ফরহাদ হোসেন সংগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুল এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, মাঠের কর্মীরা পরিশ্রম আর পকেটের পয়সা খরচ না করলে আমরা এমপি হতে পারতামনা। বাবা-মা জন্ম দিলেও রাজনীতিবীদ ও এমপি হিসাবে আমাকে জন্ম দিয়েছেন তৃণমূলের কর্মীরা। এমপিগিরি করতে হলে তাই আমাদের মাঠে বেশি যেতে হবে, মাঠের কর্মীদের কথা শুনতে হবে, তাদের মতামতে কমিটি গঠন করতে হবে। কর্মীরা সত্য-মিথ্যা বলে, জনগণের পায়ে ধরে ভোট আনে অথচ নির্বাচনের পর অনেক এমপির সাথে কর্মীরা হ্যান্ডশেকও করতে পারেন না। তিনি নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, দল থেকে কর্মীদের খেদাই করবেন না, সমন্বয় করবেন।

আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, গতবছর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তান্ডব একাত্তরের বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। আমাদের দুর্বলতার সুযোগেই তারা এটা করতে পেরেছে। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো শক্তিই আমাদের অগ্রযাত্রা রুখতে পারবে না। তিনি সুযোগ সন্ধ্যানীদের বাদ দিয়ে ত্যাগী নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠনের তাগাদা দেন। শুধু নির্বাচন আর সম্মেলন আসলেই কর্মীদের কথা মনে করলে চলবেনা তারপরেও তাদের কথা মনে রাখতে হবে।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে দলের প্রকৃত ত্যাগী-আদর্শবান নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। দলের ভেতরে শৃঙ্খলা বজায় থাকলে-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমাদেরই বিজয় হবে। আমরা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নির্দেশনায় সকলকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সম্মেলন সম্পন্ন করবো। তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভা করতে আসায় তাদের ধন্যবাদ জানান।

বর্ধিত সভা সঞ্চালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার। এসময় তিনি সাংগঠনিক প্রতিবেদনও পাঠ করেন। সভায় শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জেলা আওয়ামীলীগ উপ-দপ্তর সম্পাদক মো. মনির হোসেন। এরপর আওয়ামী লীগের জেলা কমিটি, সকল উপজেলা কমিটি ও বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটির প্রয়াত নেতাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে আত্মার শান্তি কামনায় একমিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

শেয়ার করুন