জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদে নির্বাচিত নারী সংসদ সদস্যরা জাতীয় পর্যায়ে এবং নারী অধিকারের ক্ষেত্রে কার্যকর ও গতিশীল ভূমিকা রেখেছেন।
১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ১৯৭৫ সালের ১৭ জুলাই পর্যন্ত সংসদের অধিবেশনে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য নারীর ক্ষমতায়নে বা রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসাবে বিবেচিত হয়েছে।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ‘মেম্বার অব দি ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি’তে পূর্ব পাকিস্তানে সংরক্ষিত নারী আসনে ৭ নারী সদস্য মনোনীত হন। প্রাদেশিক পরিষদে ১০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। নারী সংসদ সদস্যরা আওয়ামী লীগ দলের মনোনয়নে মনোনীত হন।
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রথম জাতীয় সংসদ ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ১৯৭৫ সালের ১৭ জুলাই পর্যন্ত। ১৯৭৩ সালের মার্চে প্রকাশিত গেজেটে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংরক্ষিত ১৫টি আসনের জন্য নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ করে দেয়।
প্রথম জাতীয় সংসদে ৮টি অধিবেশনের কার্যদিবস ছিল ১৩৪ দিন। এই কার্য দিবসগুলোতে মহিলা আসনের সংসদ সদস্যরা জাতীয় পর্যায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন।
ছয় দফা আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়ার আগে আমেনা বেগমকে (১৯২৫-১৯৮৯) আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পদে মনোনয়ন দেন বঙ্গবন্ধু। এই সময় আওয়ামী লীগের কোনো কোনো বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা আপত্তি তুলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু তখন বলেছিলেন, ‘নারীদেরও পুরুষের মতো সমান অধিকার এবং তা রাজনীতির ক্ষেত্রেও। আওয়ামী লীগ যেমন অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে, তেমনি নর-নারীর সমান অধিকারেও বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগেও নারী নেতৃবৃন্দ গড়ে তোলা দরকার।’
১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকারের মন্ত্রিসভায় শিক্ষামন্ত্রী অধ্যক্ষ বদরুন্নেসা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী অধ্যাপিকা নুরজাহান মোরশেদ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমাজকে দেখতে চেয়েছিলেন সমতার ভিত্তিতে। নারী ও পুরুষকে এক ও সমান চোখে দেখাই ছিল তাঁর মহানুভবতা। নারীর অগ্রযাত্রা ও বঙ্গবন্ধুর অবদান ওতোপ্রোতভাবে মিশে আছে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত হয়েছে সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণা-১৯৪৮।
জাতিসংঘ ঘোষিত এর মূল কথা হল- প্রতিটি মানুষের সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকার জন্মগত অধিকার। মানুষ হিসেবে এই অধিকার প্রত্যেকের সমানভাবে প্রাপ্য। মানবাধিকারের প্রতি বঙ্গবন্ধুর প্রত্যয় ছিল দৃঢ় ও অবিচল।
সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্রে যে ৩০ টি অনুচ্ছেদ রয়েছে, লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে এর প্রতিটিরই প্রতিফলন রয়েছে আমাদের সংবিধানে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ কর্তৃক নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ (সিডও)সনদ -১৯৭৯ গ্রহণের ফলে অনেক আগেই বঙ্গবন্ধু সংবিধানে নারী-পুরুষের সমঅধিকারের স্বীকৃতি দেন। সিডও সনদের ১৬ টি অনুচ্ছেদে নারীর প্রতি বৈষম্য বিলোপে যেসব অনুশাসন দেওয়া হয়েছে, তার প্রতিটি অনুশাসনই বঙ্গবন্ধুর সংবিধানে বিদ্যমান।