বেশ কয়েকমাস ধরেই ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কর্ণাটকের হিজাব বিতর্কে উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশটি। হিজাব বিতর্কের জল গড়িয়েছিল আদালত পর্যন্ত। মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সেই হিজাব মামলায় গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে কর্ণাটক হাইকোর্ট।
আদালত জানিয়েছে, ধর্ম পালনের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক নয়। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
এদিকে কর্ণাটক হাইকোর্টের এই রায়ের পর মুসলিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তারা বড় ধাক্কা খেলেন বলেই মনে করা হচ্ছে। হিজাব নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে আদালতে মোট ৫টি পিটিশন জমা পড়েছিল।
অন্যদিকে আদালতের এই নির্দেশ দেওয়ার আগে শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে কর্ণাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে যেকোনো ধরনের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। প্রশাসন জানিয়েছে, এক সপ্তাহ ধরে এই নিষেধাজ্ঞা চলবে। ম্যাঙ্গালোরেও ১৫ থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
উদুপির স্কুল কলেজগুলোও মঙ্গলবার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কর্নাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রীতুরাজ অবস্থি, বিচারপতি কৃষ্ণ এস দীক্ষিত এবং বিচারপতি জেএম খাজির একটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ হিজাব মামলা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই রায় ঘোষণা করেন।
এছাড়া রায়ে স্কুল ইউনিফর্ম নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছে আদালত। বিচারপতিদের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছেন, স্কুল ইউনিফর্ম একটি যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ, যা সাংবিধানিকভাবে বৈধ। আদালত জানিয়েছে, স্কুলের পোশাক নিয়ে রাজ্য সরকারের যেকোনো আদেশ জারি করার ক্ষমতা রয়েছে। একইসঙ্গে মামলা সংক্রান্ত রিট পিটিশনও খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
গত ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের ধর্মীয় পোশাকের ওপর অস্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কর্ণাটক আদালত। হিজাব বা গেরুয়া উত্তরীয়র ওপরও জারি হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা। কর্ণাটকের বেশ কিছু স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধ হওয়ার পক্ষে-বিপক্ষে যে বিক্ষোভ হয়েছিল, তার পরিপ্রেক্ষিতেই আদালত ওই রায় দিয়েছিল।
১১ দিনের শুনানির পর গত ২৫ ফেব্রয়ারি আদালত ওই রায় দিয়েছিল। ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অনেকেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি শুনানিতে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। তাই আমরা হাইকোর্টের রায় না আসা পর্যন্ত এই মামলায় কোনো রকম হস্তক্ষেপ করব না।
এখন হাইকোর্টের রায় সামনে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে যাবে। মঙ্গলবারের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ভারতের শীর্ষ আদালত হিজাব ইস্যুতে কী অবস্থান নেয় সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।
উল্লেখ্য, কর্ণাটকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে গত মাসে উদুপি জেলার সরকারি বালিকা পিইউ কলেজে ছয়জন মুসলিম ছাত্রীকে হিজাব পরার কারণে শ্রেণিকক্ষের বাইরে বসতে বাধ্য করার পর। সেই সময় কলেজ প্রশাসন জানায়, ইউনিফর্মের অংশ নয় হিজাব এবং ওই ছাত্রীরা কলেজের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। ছাত্রীদের ক্লাসে হিজাব পরার বিষয়ে আপত্তি জানায় স্থানীয় ডানপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠী ও তাদের ছাত্র সংগঠন।
উদুপির এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের মান্দিয়া এবং শিভামোগগা এলাকায়। সেখানকার কলেজ কর্তৃপক্ষ হিজাব নিষিদ্ধ করে। যদিও আইনে হিজাব পরে মুসলিম ছাত্রীদের ক্লাসে আসতে কোনও বাধা নেই।