বর্তমান সময়ে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে। আগামী কয়েক দশকে এই সংকট আরও তীব্র হতে পারে। ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৫০০ কোটি মানুষ পানি সংকটে ভুগতে পারে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, খরা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে এই অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। সোমবার (২১ মার্চ) জাতিসংঘের চলতি বছরের পানি উন্নয়ন প্রতিবেদনে ওঠে আসে এসব তথ্য।
এতে বলা হয়েছে, আগামী তিন দশক ধরে প্রতিবছর বিশ্বে পানির ব্যবহার ১ শতাংশ বাড়বে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানি সরবরাহের প্রচলিত উৎস খাল ও বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে বেড়ে যাবে ভূগর্ভস্থ পানির চাহিদা। বতর্মানে বিশ্বের ৯৯ শতাংশ সুপেয় পানি আসে ভূগর্ভস্থ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা থেকে। কিন্তু এর গুরুত্ব না বোঝা, প্রতিনিয়ত অবমূল্যায়ন করা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে এই সরবরাহ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
গবেষকদের দাবি, ২০১৮ সালে বিশ্বের প্রায় সাড়ে তিন শ কোটি মানুষ অন্তত এক মাস পানি সংকটে ভুগেছে। ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দাঁড়াবে ৫০০ কোটিতে।
প্রতিবেদনটির প্রধান সম্পাদক রিচার্ড কনর বলেন, ‘বৈশ্বিক পানি সংকটের সমাধান যদি আমাদের অজ্ঞাতেই থেকে যায়, তাহলে কেমন হবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে এ থেকে আমরা অনেক সুবিধা পাব।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বিশ্বে ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে পানির সরবরাহ ব্যবস্থায়ও চাপ বেড়েছে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে বিপুল পরিমাণ ভূগর্ভস্থ পানি ও এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিষয়টির ওপর আরও গুরুত্ব দিতে হবে।
ভূগর্ভস্থ পানির কেন এত গুরুত্ব, তার ব্যাখ্যাও জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরে বলা হয়েছে, বিশ্বের মোট পানির মাত্র ১ শতাংশ সুপেয় পানি, যার বেশির ভাগই পাওয়া যায় বরফের তলে। বাকি পানি লবণাক্ত। সুপেয় পানির মান সাধারণত ভালো হয়ে থাকে। কোনো ধরনের শোধন ছাড়াই এ পানি নিরাপদ ও সহজে ব্যবহার করা যায়।
অপরদিকে পৃথিবীর উপরিভাগের পানি সাধারণত খাল-বিল ও লেকে সংরক্ষিত থাকে। এই পানিসম্পদ সীমিত। দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তীব্র খরা দেখা যাচ্ছে। এতে পরিবেশগত ও সামাজিক ক্ষতি হচ্ছে। সে তুলনায় ভূগর্ভস্থ পানির ভবিষ্যৎ অনেকে ভালো। ১০ থেকে ২০ শতাংশ পানি প্রাকৃতিকভাবে পুনরায় উৎপন্ন হয়। আর এই পানি সহজেই সরু পাইপের মাধ্যমে গভীর থেকে তুলে আনা যায়।
উন্নত প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরিতে ভূগর্ভস্থ পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কৃষিকাজে ব্যবহৃত পানির এক-চতুর্থাংশই আসে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে। বিশ্ববাসীর দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত পানির অর্ধেকই সরবরাহ করা হয় ভূগর্ভস্থ পানি থেকে। গ্রামীণ জনপদের মানুষের বিশুদ্ধ খাবার পানির সবচেয়ে সস্তা মাধ্যম এটি। গ্রামের মানুষ সরকারি কিংবা বেসরকারি পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় সঙ্গে জড়িত নয়। তবে অতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি তোলা হলে পরিণতি খারাপ হতে পারে। এর ফলে জমি শুকিয়ে পানির সরবরাহ কমে যেতে পারে।