ইউক্রেন ইস্যুতে মতবিরোধ, পদত্যাগ করে রাশিয়া ছাড়লেন পুতিনের উপদেষ্টা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আনাতোলি চুবাইস
আনাতোলি চুবাইস। ছবি : ইন্টারনেট

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপদেষ্টা এবং দেশটির জলবায়ু বিষয়ক দূত আনাতোলি চুবাইস পদত্যাগ করেছেন। ইউক্রেনে রুশ সামরিক বাহিনীর অভিযান ও যুদ্ধের বিরোধিতা এবং এই ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে পদত্যাগ করেন তিনি।

এছাড়া পদত্যাগ করার পাশাপাশি ইতোমধ্যে রাশিয়াও ত্যাগ করেছেন আনাতোলি চুবাইস। বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত দু’জন ব্যক্তির বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে হামলা করার কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে মস্কো কড়া প্রতিক্রিয়া পেলেও আক্রমণ নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে রুশ প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা হিসেবে ক্রেমলিনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন চুবাইস।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, পদত্যাগের আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আন্তর্জাতিক দূত হিসেবে দায়িত্বপালন করছিলেন আনাতোলি চুবাইস। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে তাকে বিশেষ প্রতিনিধির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ব্লুমবার্গ বলছে, ৬৬ বছর বয়সী আনাতোলি চুবাইস ১৯৯০-এর দশকের কয়েকজন অর্থনৈতিক সংস্কারকদের মধ্যে একজন যিনি প্রেসিডেন্ট পুতিনের সরকারে কাজ করছিলেন এবং একইসঙ্গে পশ্চিমা দেশের কর্মকর্তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। অবশ্য চুবাইসের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলেও তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেননি ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।

একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে মার্কিন এই সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, চুবাইস গত মঙ্গলবার সহকর্মী ও বন্ধুদের কাছে একটি চিঠিতে পদত্যাগের বিষয়ে ঘোষণা দেন। এর আগে গত সপ্তাহে তিনি সম্ভাব্য এই পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

সেসময় নিজের সহকর্মী অর্থনৈতিক সংস্কারক ইয়েগর গাইদারের মৃত্যুবার্ষিকীতে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে আনাতোলি চুবাইস বলেন, আমার সহকর্মী (ইয়েগর গাইদার) ‘কৌশলগত ঝুঁকিগুলো আমার চেয়ে ভালো বুঝতে পেরেছিলেন এবং আমি ভুল ছিলাম।’

২০০৬ সালে নিজের বই ‘ডেথ অব এম্পায়ার’-এ গাইদার সোভিয়েত ইউনিয়নের সাম্রাজ্যবাদী প্রলোভন সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন। এমনকি সোভিয়েতে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্খা তিনি পুতিনের অধীনে বেড়ে উঠতে দেখেছিলেন। বইতে তিনি লিখেছিলেন, ‘সমাজকে বোঝানো কঠিন নয় যে এমন একটি রাষ্ট্র যে হঠাৎ করে ভেঙে পড়েছিল তা আবারও দ্রুত পুনর্গঠিত হতে পারে। এটি কেবলই মোহ, বিপজ্জনক।’

উল্লেখ্য, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে রাশিয়ার অভ্যান্তরীণ সমালোচকদের ওপর চাপ বাড়িয়েছে মস্কোর সরকার। গত ১৬ মার্চ প্রেসিডেন্ট পুতিন সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের জন্য গোপনে কাজ করে যাওয়া ‘প্রতারক ও বিশ্বাসঘাতক’ থেকে রাশিয়াকে তিনি পরিষ্কার করবেন। পশ্চিমারা রাশিয়াকে ধ্বংস করতে চায় বলেও সেসময় দাবি করেছিলেন পুতিন।

শেয়ার করুন