দেশে গত এক বছরে (২০২১ সাল) সর্বোচ্চ যক্ষ্মা রোগী ৮০ হাজার ১৩৭ জন শনাক্ত হয়েছে ঢাকা বিভাগে এবং সর্বনিম্ন ১৯ হাজার ৪৭ জন শনাক্ত হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের ৩০টি সর্বাধিক যক্ষ্মায় আক্রান্ত দেশের একটি। ১৯৯৩ সালে এই রোগের ভয়াবহতায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যক্ষ্মাকে গ্লোবাল ইমার্জেন্সি ঘোষণা করে।
চিকিৎসকদের মতে, জন্মগতভাবেই দেশের মোট জনসংখ্যার একটি অংশ যক্ষ্মার জীবাণু বহন করে। তবে বাহক এই রোগে আক্রান্ত হবে বিষয়টি এমন নয়। জীবাণুর ধারক নিজে আক্রান্ত না হলেও তার মাধ্যমে অন্যের শরীরে যক্ষ্মা ছড়াতে পারে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের এই জীবাণুতে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদেরই এই রোগ বেশি হয়। এছাড়া পরিবেশ দূষণ, দরিদ্রতা, মাদকাসক্তি, অপুষ্টি যক্ষ্মার হার বাড়ার অন্যতম কারণ।
বাংলাদেশ জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট ড. আবদুল্লাহ মেহেদি বলেন, ‘যক্ষ্মারোগে বাংলাদেশ বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ দেশের একটি। বিশ্বের মোট রোগীর প্রায় ৩ দশমিক ৬ শতাংশ বাংলাদেশে। তবে বাংলাদেশ ২০৩৫ সালের মধ্যে যক্ষ্মা নির্মূল করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে দৈনিক গড়ে ২০ থেকে ২৫ জন যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হন।’
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে নতুন তিন লাখ ৭ হাজার ৪৪৪ জন যক্ষ্মারোগী শনাক্ত হয়েছে। তবে এই রোগের নিরাময়ের হার গত ১০ বছর ৯৫ শতাংশের বেশি। ২০২১ সালে ছিল ৯৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। যক্ষ্মায় ২০১০ সালে প্রতি লাখে মৃত্যু ছিল ৫৪ জন। বর্তমানে তা কমে ২৭ জনে এসে দাঁড়িয়েছে।
জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে দেশের বিভাগীয় শহরের মধ্যে সর্বোচ্চ আক্রান্ত ঢাকায় ৮০ হাজার ১৩৭ জন। এছাড়া চট্টগ্রামে ৬০ হাজার ২২ জন, খুলনায় ৩৯ হাজার ৭৯৬, রংপুরে ৩১ হাজার ৭০৮, রাজশাহীতে ২৯ হাজার ৩৩৫, সিলেটে ২৫ হাজার ৯১৮, বরিশালে ২১ হাজার ৪৮১ এবং ময়মনসিংহে ১৯ হাজার ৪৭ জন।
দেশের সরকারি ৪৪টি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, সাতটি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতল, সদর হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্তর্বিভাগ, বহির্বিভাগ ও এনজিও ক্লিনিকে যক্ষ্মার চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।
ড. আবদুল্লাহ মেহেদি বলেন, অনেকে মনে করে এই রোগ শুধু ফুসফুসে হয়। এটা ঠিক নয়। এটি দেহের যে কোনো স্থানে হতে পারে। তবে যক্ষ্মা হয় না, শরীরে এরকম অঙ্গ খুব কমই আছে। ফুসফুসের আবরণী, লসিকাগ্রন্থি, যকৃত, বৃক্ক, মস্তিষ্ক ও এর আবরণী, অন্ত্র, হাড় এমনকি ত্বকেও হতে পারে যক্ষ্মা। তবে ফুসফুসে যক্ষ্মা সংক্রমণের হার সবচেয়ে বেশি, যা শতকরা ৮৫ শতাংশ। শরীরের যে অংশে যক্ষ্মার জীবাণু সংক্রমিত হবে সেই অংশটি ফুলে উঠবে। ফুলে ওঠা অংশটি খুব শক্ত বা একদম পানি পানি হবে না, সেমি সলিড হবে। ফোলার আকার বেশি হলে ব্যথাও হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, রোগটি সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় অনেকদিন ওষুধ খেতে হয়। যেটা ছয় থেকে নয় মাস পর্যন্ত হয়।
চিকিৎসকদের দেওয়া এই ছয় থেকে নয় মাসের ওষুধ ও চিকিৎসা নিরবচ্ছিন্নভাবে শেষ করার পরামর্শও দেন তিনি।