হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি তুমি বঙ্গবন্ধু মুজিবুর/ তোমার দু’চোখে দেখা স্বপ্ন এ বুকে/ আমি চলি দূর বহুদূর …।” কথাগুলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে গাওয়া অনন্য সাধারণ একটা গানের। প্রবল দায়িত্ববোধ নিয়ে গানটি গেয়েছেন দুই বাংলার দুই সঙ্গীতশিল্পী। এ বাংলার ফারহানা শান্তা, ওপার বাংলার রূপঙ্কর বাগচী।
জন্মশতবর্ষে রাষ্ট্রপিতা বঙ্গবন্ধুর (ফাউন্ডিং ফাদার অব দ্য নেশন) প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বেশ কয়েকটা গান গাওয়া হয়েছে, সেগুলোর ভিডিওচিত্র নির্মিত হয়েছে। ভিন্নধারার গানের শ্রোতানন্দিত শিল্পী ফারহানা শান্তা ও তাঁর সহশিল্পীর গাওয়া গানটি নানা বৈশিষ্ট্যে ব্যতিক্রমী। গানের ক্ষেত্রে যুগ যুগ ধরেই প্রতিটি দেশের স্বকীয়তা ছিল। আছে, আগামীতেও থাকবে। সময় গড়ানো, মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে অন্য সবকিছুর মতো কোনো ভূখণ্ডের গানের ধরন, কাঠামো, সুরেও পরিবর্তন আসে।
আন্তর্জাতিকায়নের এ কালে পরদেশি সুরের একটা ধাক্কাও আছে। তাই সময়, চারপাশের বাস্তবতা ধারণ করে ও একই সঙ্গে গড্ডলিকা প্রবাহে গা না ভাসিয়ে গানে স্বকীয়তা ধরে রাখাটাই মূখ্য। এভাবেই একটা গান হয়ে উঠে ভালো গান। ফারহানা শান্তা, রূপঙ্করের গাওয়া গানটি এসব বৈশিষ্ট্যেই অনন্য। গানের অভিব্যক্তি চমৎকার। কণ্ঠমাধুর্যে গানটি শুনতে ভালো। বলা যায়, অভিব্যক্তি গানটিকে একটি অন্য মাত্রা দিচ্ছে। শিল্পীদের বলিষ্ঠ গায়নে নিজস্বতার ছাপ রয়েছে। যা নিজস্ব নৈপুণ্যে শ্রোতাদের প্রশংসা আদায় করে নেয়।
গানটি গাওয়া হয় করোনাভাইরাসের দাপটে থমকে যাওয়া সময়ে, গত বছর। যখন মানুষ ভাবতে শুরু করেছিল, আড়াল ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই, দূরত্ব ছাড়া গত্যন্তর নেই। তখনো মুখোশ-ঢাকা সারি সারি মুখের আড়ালে সঙ্গীতপিয়াসী অজস্র কান বুঁদ হয়ে ছিল এমন একটা গানের জন্য।
যোগাযোগ করলে কানাডা প্রবাসী সঙ্গীতশিল্পী ফারহানা শান্তা মত ও পথকে বলেন, ‘গানটি কেমন হয়েছে, জানি না। তবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা থেকে গেয়েছি। গানটি করতে পেরে নিজেকে খুব ধন্য মনে করছি। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি গান করার অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল।’
তিনি জানান, ‘কোনো প্রত্যাশা নিয়ে গানটি করিনি। তবে শ্রোতাদের কাছ থেকে প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। অনেকেই খুব উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁকে নিয়ে অনেক গান হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কিছু গান সরকারিভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা হচ্ছে। শুনেছি, আমার গানটি সংরক্ষণের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। এটাই আমার বড় পাওয়া।’
কোনো ভালো গানকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, এগিয়ে রাখতে হয়। এখানে রাষ্ট্র, সরকার, সংবাদমাধ্যমেরও দায় থাকে। রাষ্ট্র, রাজনৈতিক শক্তি কোনো কবিতা, গানের পেছনে এসে দাঁড়ালে তা শিল্প হয়ে উঠে, ইতিহাসের পাতায় এর অজস্র নজির আছে। কলকাতার আগে ঢাকায় টেলিভিশনের যাত্রা নিয়ে কতো গর্ব! অথচ কলকাতার টিভি চ্যানেলগুলো যেভাবে গানের প্রতিভাধর খুঁজে বের করে, ঢাকার চ্যানেলগুলো তা সেভাবে করে না।
কলকাতায় তখনো টিভি আসেনি। সেখানকার অনেক আগেই ঢাকায় টেলিভিশন অনুষ্ঠানের সূচনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর প্রথম ভারত ভ্রমণে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে কলকাতায় যান। কলকাতা ময়দানে বঙ্গবন্ধুর সংবর্ধনা কভার করার জন্যে বাংলাদেশ টিভির ওবি ভ্যান গেলো। আকাশবাণী থেকে ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে কলকাতার অনেক সাংবাদিক ওবি ভ্যানের ভেতরে ঢুকে টিভির আশ্চর্য কর্মকাণ্ড প্রথম দেখার সুযোগ পান। কলকাতায় এর বছর চারেক পরে টিভির যাত্রা।
১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট থেকে দুইঘণ্টার সম্প্রচার আরম্ভ হয়। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অন্যান্য শিল্পীদের সঙ্গে ছিলেন ঢাকার শাহনাজ রহমতুল্লাহ, হামিদা আতিক প্রমুখ। তাঁদের নেতৃত্বে ছিলেন বিটিভির তখনকার মহাপরিচালক জামিল চৌধুরী।