প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী জানিয়েছেন, হাতেগোনা কয়েকজন অসৎ কর্মকর্তার কারণে যদি বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে তাদের ব্যাপারে কোনো আপস হবে না।
শনিবার (২ এপ্রিল) বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।
প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রধান বিচারপতি হয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছি, দেশে অধিকাংশ জুডিশিয়াল কর্মকর্তাই সৎ। হাতেগোনা কয়েকজন অসৎ কর্মকর্তার জন্য জন্য জুডিশিয়ারি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদেরকে শনাক্ত করবো। তাদের ক্ষেত্রে আমাদের কোনো আপস থাকবে না।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, এরইমধ্যে একটি কমিটি করে দিয়েছি। যারা ভালো করবেন, তাদেরকে প্রতি বছর ‘প্রধান বিচারপতি’ পদক দেওয়া হবে। এজন্য একটা নীতিমালা করা হয়েছে।
বিচারকদের বদলি এবং পদায়ন প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারকদের পোস্টিংয়ের জন্য সিনিয়রিটি এবং যোগ্যতা দেখে পোস্টিং দেবো। এ ক্ষেত্রেও কোনো কম্প্রোমাইজ করবো না। একইভাবে পদায়নের জন্য কোনো সিনিয়রিটি ব্রেক করবো না। সিনিয়র কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে যদি দুর্নীতির অভিযোগ বা অসততা না থাকে, তাহলে আমরা সিরিয়াল ব্রেক করবো না। অন্ততপক্ষে আমি যে কদিন আছি, এটা মেনে চলার চেষ্টা করবো। দেশের বিচার বিভাগ সঠিক পথে চলছে এবং চলবে।
তিনি বলেন, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আমাদের বেতন হয়। জজদের লক্ষ্য হবে জনগণের আস্থা অর্জন করা। বিচারপ্রার্থীদেরকে যাতে দিনের পর দিন আদালতের বারান্দায় ঘুরতে না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, অধিকাংশ বিচারপ্রার্থী হয় জমি বন্ধক রেখে, না হয় হালের গরু বিক্রি করে অথবা গোলার ধান বিক্রি করে আইনজীবীকে টাকা দেন। এখন এসব বিচারপ্রার্থী জনগণ যদি দিনের পর দিন আদালতে ঘুরতে থাকেন, তাহলে তারা নিঃস্ব হয়ে যাবেন। তাদেরকে যত দ্রুত মুক্তি দেওয়া যায় ততই ভালো, তাদের জন্য এবং জাতির জন্য।
মামলাজট প্রসঙ্গে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি থাকলে আমরা মামলার জট থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারবো।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারী বিচারকদের উদ্দেশ্য করে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিচার বিভাগে নারীদের সংখ্যাই শুধু বাড়েনি, তারা সেখানে মেধা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন।
বিচার বিভাগ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, মামলাজট কমানো এবং বিচারপ্রার্থী মানুষকে স্বল্প সময়ে ন্যায়বিচার দিতে পারলে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার পথে আমরা অনেকটা এগিয়ে যাবো। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারক হোসনে আরা বেগমের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তৃতা করেন আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও এম. ইনায়েতুর রহিম, আইন মন্ত্রণালয় সচিব গোলাম সারওয়ার এবং সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বজলুর রহমান।