মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণ প্রতিরোধ জরুরি

ডা. মুহম্মদ শফিকুল হক

শব্দদূষণ
শব্দদূষণ। প্রতীকী ছবি

শব্দদূষণ স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আপনি জানেন কি, তিন বছর বয়সের নিচে কোনো শিশুর কানে যদি খুব কাছ থেকে ১০০ ডেসিবেল শব্দ আসে, তাহলে তার শ্রবণক্ষমতা বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে? অতি সম্প্রতি আমাদের রাজধানী ঢাকা বিশ্বের এক নম্বর শব্দদূষণের সিটির তকমা পেয়েছে। যেখানে একটি সাধারণ সিটির শব্দদূষণের মাত্রা ৫০ ডেসিবেল হওয়া উচিত, সেই জায়গায় আমাদের ঢাকার শব্দদূষণের মাত্রা দ্বিগুণেরও বেশি, অর্থাত্ ১১৯ ডেসিবেল। চিন্তা করা যায় আমাদের এই ঢাকায় ২ কোটিরও বেশি জনবসতি রয়েছে। মানবস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করলে গা শিউড়ে ওঠে। শব্দদূষণের কারণে হূদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, বুক ধড়ফড়, মাথাব্যথা, খিটখিটে মেজাজ, পেপটিক আলসার, অস্হিরতা, উত্কণ্ঠা, অমনোযোগী ভাব, ঘুমে ব্যাঘাত, শ্রবণশক্তি, স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, এমনকি মেয়েদের পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অপরদিকে ঢাকা মহানগরীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ হচ্ছে শব্দদূষণ। রাজধানী ঢাকার সৃষ্ট শব্দদূষণে প্রতি দিন প্রতি মুহূর্তে হাজার হাজার শিশুর শ্রবণ ক্ষমতা ধ্বংস হচ্ছে।

যানবাহন, যানবাহনের হর্ন, মাইক, লাউড স্পিকার, ইট ও পাথর ভাঙার মেশিন, জেনারেটর ইত্যাদি থেকে নির্গত শব্দ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্হে্যর জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই সময় এসেছে এই শব্দদূষণের হাত থেকে জাতিকে রক্ষা করা। যদিও বিষয়টি মোটেও সহজসাধ্য নয়। তাই দেরি না করে জনসচেতনতার মাধ্যমে এবং আইন প্রয়োগ করে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।

universel cardiac hospital

বাড়িতে, অফিসে, রাস্তাঘাটে, বিপণি কেন্দ্রে, রেল, বাস স্টেশনের মাধ্যমেও শব্দদূষণ হচ্ছে। শব্দদূষণ সম্পর্কে এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বিএএফ শাহীন কলেজের কাছে শব্দদূষণ দিনের বেলায় ৭৪ ডেসিবেল এবং রাতের বেলায় ৮৩ ডেসিবেল। মতিঝিল সরকারি হাই স্কুলের কাছে দিনে ৭৯ ডেসিবেল এবং রাতে ৮৫ ডেসিবেল, ধানমন্ডি সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের সামনে দিনের বেলায় ৭৫ ডেসিবেল, বিএসএমএমইউ হাসপাতালের কাছে দিনে ৭৫ ডেসিবেল এবং রাতে ৮৩ ডেসিবেল। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্হার মতে, নগর পরিবেশের জন্য নিরাপদ শব্দ মাত্রা হচ্ছে ৪৫ ডেসিবেল।

বিভিন্ন মাত্রার শব্দ ভিন্ন ভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করে। যেমন : ৩০-৩৫ ডেসিবেলের ওপর শব্দমাত্রায় : নার্ভাসনেস ও ঘুমের ব্যাঘাত; ৬৫ ডেসিবেলের ওপর শব্দমাত্রায় : হৃদরোগ; ৯০ ডেসিবেলের ওপর শব্দমাত্রায় : আলসার, শ্রবণে ব্যাঘাত ও স্নায়ুতন্ত্রের পরিবর্তন; ১২০ ডেসিবেলের ওপর শব্দমাত্রায় : শ্রবণযন্ত্রে ব্যথা এবং স্হায়ীভাবে শ্রবণশক্তি লোপ পেতে পারে। এছাড়া শব্দদূষণের ফলে শারীরিক ও মানসিক দুই ধরনের সমস্যাই দেখা দেয় এবং এটা হতে পারে স্হায়ী বা অস্হায়ী। হঠাত্ কোনো উচ্চশব্দে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে এবং সঙ্গে রক্তক্ষরণও হতে পারে। উচ্চ শব্দে কানের মধ্যে ইনফ্লামেশন হয়ে ইফিউশন হতে পারে। উচ্চ শব্দের উত্সের কাছে দীর্ঘদিন কাজ করলে একজন মানুষের শ্রবণক্ষমতা স্হায়ীভাবে বিনষ্ট হয়ে যেতে পারে। রোগী, গর্ভবতী নারী ও শিশুদের জন্য শব্দদূষণ মারাত্মক ক্ষতির কারণ। শব্দদূষণের কারণে বিকলাঙ্গ শিশুও জন্মগ্রহণ করতে পারে।

প্রচণ্ড শব্দদূষণ শিশুদের মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনছে। কোনো শিশুর কানে যদি খুব কাছ থেকে উচ্চ শব্দ আসে, তাহলে তার শ্রবণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। শব্দদূষণের কারণে প্রতি দিন হাজার হাজার শিশুর শ্রবণক্ষমতা ধ্বংস হচ্ছে। এর প্রতিকার জরুরি।

লেখক : স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা

শেয়ার করুন