রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দুটি উড়োজাহাজের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে দুটি উড়োজাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গ্রাউন্ডেড হয়েছে। বোয়িং ৭৭৭ এবং বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের মধ্যে এই সংঘর্ষ হয়।
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। এটি নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের হ্যাঙ্গারে আগে থেকেই একটি বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রাখা ছিল। রোববার দুপুরে বিমানের আরেকটি বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য হ্যাঙ্গারের দিকে নেওয়া হয়। হ্যাঙ্গারের ভেতরে প্রবেশ করানোর সময় ৭৩৭ উড়োজাহাজের সামনের অংশের সঙ্গে ভেতরে থাকা ৭৭৭ উড়োজাহাজের পেছনের অংশে ধাক্কা লাগে। এতে দুটি উড়োজাহাজই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরমধ্যে বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজের সামনের অংশে থাকা ওয়েদার র্যাডম নষ্ট হয়ে গেছে। আর বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের লেজের ভার্টিকাল স্ট্যাবিলাইজার ভেঙে গেছে।
সূত্র জানায়, এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। সোমবার (১১ এপ্রিল) দুপুরে তিনি উড়োজাহাজ দুটি পরিদর্শনে বিমানবন্দরের হ্যাঙ্গারে যান। এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা তা তদন্তের নির্দেশ দেন।
এদিকে বিমানের পক্ষ থেকে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে উড়োজাহাজ দুটি মেরামত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরামর্শ নিতে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বিমানের উপ-মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার বলেন, ‘ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হচ্ছে।’
বর্তমানে বিমান বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা ২১টি। এরমধ্যে বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ৪টি, বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার ৩টি, বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর ৪টি, বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ৬টি এবং ৫টি ড্যাশ-৮।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২০০৮ সালে মার্কিন উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে ৩টি মডেলের ১০টি নতুন বিমান ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ইউএস ডলারে ক্রয়ের জন্য চুক্তি করে। ১০টি উড়োজাহাজের মধ্যে ৪টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, ২টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ এবং ৪টি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ অর্ডার করা হয়। পরে ২০১৯ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আরও দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ ক্রয় করে।
বিমানে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয় উড়োজাহাজ কেনা, লিজ নেওয়া, মেরামতের জন্য যন্ত্রাংশ কেনার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। পাঁচ বছরের চুক্তিতে মিসরের ইজিপ্ট এয়ার থেকে বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআরই উড়োজাহাজ দুটি লিজ নিয়েছিল বিমান। আর উড়োজাহাজ দুটি বহরে যুক্ত হয় ২০১৪ সালের মার্চ ও মে মাসে। এক বছরের কম সময়ের মধ্যে একটি উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। সেটি সচল করতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয় এ ইঞ্জিনটিও। আবারও ভাড়ায় আনা হয় ইঞ্জিন। পরে ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও বিকল হয়। তারপর ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। এভাবে দুটি বোয়িং ৭৭৭-২০০ উড়োজাহাজের পেছনে পাঁচ বছরে নিট ক্ষতি ১১শ’ কোটি টাকা। এই উড়োজাহাজ দুটি চালিয়ে বিমান আয় করে ২২শ’ কোটি টাকা। তবে দুটি উড়োজাহাজের পেছনে ব্যয় হয় ৩৩শ’ কোটি টাকা। পরে লোকসান দিয়ে উড়োজাহাজ দুটি ফেরত দেয় বিমান।
অন্যদিকে, আয়ারল্যান্ড থেকে ২০০৯ সালে ইজারায় নেওয়া পুরাতন দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ ফেরত না দিয়ে কিনে নিয়েছে বিমান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লিজের উড়োজাহাজ ফেরত দেওয়ার খরচ ও জটিলতা এড়াতে এই কৌশল অবলম্বন করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ।