রাজধানীতে বেপরোয়া ছিনতাইকারী চক্র

মহানগর প্রতিবেদক

ছিনতাই
ফাইল ছবি

ঈদ সামনে রেখে ঢাকার রাস্তায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারী চক্র। সুযোগ পেলেই ছোঁ মেরে মোবাইল ফোনসহ জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত নগরীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে। পথে পথে ওত পেতে থাকা ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা দিনে-দুপুরেও ছিনতাই করে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার মাঝেও বেড়েছে মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা। মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের মামলা রেকর্ড হয় না- এমন অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে, কোনো থানায় ছিনতাই-ডাকাতির মামলা না নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পুলিশের একটি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে ছিনতাইয়ে সক্রিয় রয়েছে এমন পাঁচ শতাধিক ব্যক্তির তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এদের অধিকাংশই মাদকসেবী। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, তালিকা অনুযায়ী উত্তরা বিভাগে ৫২ জন, মিরপুর বিভাগে ৫৬ জন, গুলশান বিভাগে ৯৭ জন, রমনা বিভাগের ১১৬ জন, তেজগাঁও বিভাগের ১২২ জন ও ওয়ারী বিভাগে শতাধিক ছিনতাইকারী সক্রিয় রয়েছে।

জানা গেছে, ভোরে পুলিশি নিরাপত্তার ঢিলেঢালাভাব থাকার সুযোগটা নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। মধ্যরাত থেকে কোলাহলমুক্ত ভোরে বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠে ছিনতাইকারীরা। ছিনতাইয়ের প্রতিবাদ করলে দুর্বৃত্তরা আগ্নেয়াস্ত্র বা ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে। ছিনতাইকারীরা কখনও মোটরসাইকেল, কখনও প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাস নিয়ে পথচারী বা রাস্তায় অপেক্ষমাণ ব্যক্তির কাছ থেকে মোবাইল ফোন সেট, মূল্যবানসামগ্রী, ভ্যানিটি ব্যাগ, গলার চেন ছিনিয়ে নেয়।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নগরীর ৫০ থানার শতাধিক স্থানে ৫ শতাধিক ছিনতাইকারী তৎপর রয়েছে। তারা ৩-৪ জন করে ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে মূলত অপরাধ সংঘটিত করে। ছিনতাইয়ের কাজে বেশিরভাগ ছিনতাইকারী মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাস ব্যবহার করে। গোয়েন্দা সংস্থার ভুয়া পরিচয় দিয়ে ছিনতাইকারীরা মানুষের সর্বস্ব লুটে নেয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০টির বেশি চক্র রয়েছে, যারা শুধু মোবাইল ফোন ছিনতাই করে। এসব মোবাইল সেট তারা আইএমই নম্বর পরিবর্তন করে বিক্রি করে দেয়।

এ অবস্থায় খোদ পুলিশ কর্মকর্তারাই ছিনতাই এড়াতে জনগণকে নির্জন এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থান এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। এরপরও ঘটছে অপরাধ। গত শনিবার রাত ২টার দিকে গাবতলী ব্রিজ এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানজট লাগে। যানজটে আটকে থাকা ওয়েলকাম পরিবহনের একটি বাসে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন আজিজুল নামের এক যাত্রী। মুহূর্তেই এক ছিনতাইকারী তার মোবাইল টান দিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ শুধু একটি ঘটনা নয়। এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে, নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে, টার্মিনালে ও বাস স্টপেজে। শুধু ছিনিয়ে নিয়েই ক্ষান্ত হয় না এসব দুর্বৃত্ত। বাধা পেলেই এরা হামলে পড়ে। ছুরিকাঘাত করে প্রাণনাশের মতো ঘটনাও ঘটায়।

২৭ মার্চ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে কাজীপাড়া এলাকায় মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন দন্ত চিকিৎসক আহমেদ মাহি বুলবুল। ছিনতাইকারীরা ছুরিকাঘাত করে তার একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। পরে গোয়েন্দা পুলিশ ছিনতাই দলের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ডা. বুলবুলের খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনটি।

এছাড়া ২৩ মার্চ বংশাল থানার ফটকে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে ৫ পুলিশ সদস্য আহত হন। আহত পুলিশ সদস্যদের একজনকে গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন-এসআই রবি আহসান, এএসআই তাজুল ইসলাম, কনস্টেবল নজরুল ইসলাম, রবি এবং শফিকুল। ওইদিন ফুলবাড়িয়ার নর্থ সাউথ রোড এলাকা থেকে ইমন ও জুয়েল নামে দুই ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বংশাল থানার গেটে গাড়ি থামিয়ে তাদের শরীর তল্লাশি করার সময় ইমন সুইচ গিয়ার চাকু বের করে পুলিশকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে আহত করে। কনস্টেবল নজরুল ইসলামের পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়।

২২ মার্চ মাহমুদ হোসাইন নামে এক ব্যক্তি শাহবাগ থেকে রিকশায় সেগুনবাগিচা যাওয়ার সময় রমনা পার্কের কাছে কয়েকজন ছিনতাইকারী মোটরসাইকেলে এসে তার কাছে থাকা মূল্যবান সবকিছু নিয়ে পালিয়ে যায়। ১৭ মার্চ সাংবাদিক কামাল হোসেন তালুকদার গুলিস্তান থেকে আজিমপুর বাসায় যাওয়ার পথে ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। ছিনতাইকারীরা তার সঙ্গে থাকা ব্যাগ ও মোবাইল ফোন নিতে সজোরে ধাক্কা দিয়ে রিকশা থেকে ফেলে দেয়। এতে সাংবাদিক কামাল মারাত্মক আহত হন।

এছাড়া ২০ ফেব্রুয়ারি ভোরে সায়েদাবাদে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মোশাররফ হোসেন নামের এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী নিহত হন। পুলিশ জানায়, গেণ্ডারিয়া থেকে সায়েদাবাদ যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীরা তার বুকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ফোন, টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এতে তিনি গুরুতর আহত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

শেয়ার করুন