করোনার কাল কাটিয়ে প্রাণের উৎসবে আবারও দুয়ারে এসেছে পহেলা বৈশাখ। গুণ গুণ করে গাইছে সকলে এসো হে বৈশাখ এসো এসো। সকালের নতুন সূর্যটি যেন আজ জানান দিল নতুন বছরের আগমনী বার্তার। যে বার্তা শুভবোধ জাগিয়ে তোলার বার্তা, যে বার্তা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের। আর তারই প্রত্যয় নিয়ে ছায়ানট ‘নব আনন্দে জাগো’ শীর্ষক প্রভাতী আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলা নববর্ষ-১৪২৯ বরণ করে নিল।
বৃহস্পতিবার প্রথম প্রহরে যন্ত্রবাদনের মধ্য দিয়ে রমনার বটমূলে সূচনা হয় ছায়ানটের বর্ষবরণ ১৪২৯। এরপর পরিবেশন করা হয়েছে সম্মেলক কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘মন, জাগ মঙ্গললোকে’। এর মধ্য দিয়ে করোনা মহামারিকে জয় করে উদযাপন হলো পহেলা বৈশাখ।
এ আনন্দ আয়োজনে যোগ দিতে সকালে পায়ে হেঁটে দূর-দূরান্ত থেকে এসে লাল-সাদা শাড়ি আর পাঞ্জাবি-ফতুয়ায় দলে দলে ভিড় করেছেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। তাদের হাতে ছিল ফুল, মাথায় ফুলের টায়রা, গালে বৈশাখী আলপনা। যেন জাতি ধর্ম বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে প্রাণে প্রাণ মিশে একাকার হয়ে গেছে।
ছায়ানটের বর্ষবরণের এবারের আয়োজনটি সাজানো হয় ৩৭টি গানের সমারোহে। এর মধ্যে পঞ্চকবির গান, ব্রতচারীদের ‘বাংলা ভূমির প্রেমে আমার প্রাণ হইল পাগল’, লোকগান ‘নাও ছাইড়া দে মাঝি, পাল উড়াইয়া দে’ প্রভৃতি গান রয়েছে। সঙ্গে ছিল মনোমুগ্ধকর আবৃত্তিও। এবারের পরিবেশনে অংশ নেওয়া শিল্পী সংখ্যা ৮৫ জন। ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুন প্রতিবছরই এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। তবে এবার তিনি ৯০ বছরে পা দিয়েছেন, বয়সের কারণে কিছুটা দুর্বল। তাই সেভাবে কথা বলেননি। তবে গেয়ে শুনিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মফিদুল হক বলেন, একটি মানবিক সমাজ গঠনে আমাদের প্রাণিত করে বাংলা নববর্ষ। এই প্রত্যয়ের আহ্বানে অর্ধশত বছর ধরে সুর ও বাণীর আবহে রমনার বটমূলে আয়োজিত হচ্ছে বাঙালির মিলন মেলা। করোনার কারণে গত দুই বছর সামাজিকভাবে আমরা বন্দি হয়ে ছিলাম। সেই দুঃসময় কাটিয়ে এবার নব আনন্দে জাগার আয়োজন আমাদের।
১৯৬৭ সালে ছায়ানটের আয়োজনে প্রথম রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখের সূর্যোদয়ের সময় সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। এরপর কেবল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বৈরী পরিবেশের কারণে অনুষ্ঠান হতে পারেনি। ২০০১ সালে এ গানের অনুষ্ঠানে জঙ্গিরা ভয়াবহ বোমা হামলা করলেও অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েনি। কিন্তু গত দুই বছর করোনা সংক্রমণের তীব্রতায় বটমূলে অনুষ্ঠানে ছন্দপতন ঘটেছিল। এ বছর সেই দুঃসহকাল কাটিয়ে নব আনন্দে জেগে উঠল। জেগে উঠল বাঙালি।