সাম্প্রদায়িক প্ররোচনার অভিযোগ তুলে মুন্সিগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। স্কুলের কিছু ছাত্র তাঁকে হেনস্তা করেছে। তাঁকে নিরাপত্তা না দিয়ে উল্টো মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে জেল খাটানো হয়েছে। একজন শিক্ষকের সঙ্গে ন্যক্কারজনক আচরণ করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জ সার্কিট হাউসে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সদস্যরা এসব কথা বলেন। সভাটির আয়োজন করে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
বক্তারা বলেন, শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল ১৯ দিন পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বটে, তবে অতীতের অভিজ্ঞতায় বোঝা যায়, বছরের পর বছর আদর্শবান একজন শিক্ষককে মিথ্যা অভিযোগের গ্লানিকর মামলার বোঝা বইতে হবে। যেমনটি হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিরীহ জেলে রসরাজ এবং এই ধরনের সাম্প্রদায়িক মামলার অন্য ভুক্তভোগীদের ক্ষেত্রে। শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের ওপর সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
সভায় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য ১৯৭৫-এর পর বেশির ভাগ সময় বাংলাদেশে ক্ষমতায় থেকেছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি। যারা আমাদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দীর্ঘ ঐতিহ্য মুছে ফেলে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো মনোলিথিক মুসলিম রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছে। এই ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত আছে।
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৪ সালে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃস্থাপন, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সমান অধিকার এবং মর্যাদা নিশ্চিতের জন্য সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছি। উপযুক্ত আইনের অভাবে অপরাধীদের শাস্তি প্রদান কিংবা ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার প্রদান সম্ভব হয়নি। এখনো হচ্ছে না।’
সভায় বক্তারা বলেন, অবিলম্বে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রসরাজ দাস, সুনামগঞ্জের ঝুমুর দাসসহ সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রমূলক সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। প্রতিটি ঘটনার ষড়যন্ত্রের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করতে হবে।
সভায় শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ মৃণাল কান্তি দাস, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শিক্ষাবিদ শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক মফিদুল হক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, আইনজীবী তুরিন আফরোজ, অধ্যাপক মো. মামুন আল মাহতাব, অধ্যাপক জিনাত হুদা চৌধুরী প্রমুখ।