যানজট নিরসনে খাল উদ্ধার করে নৌকা হতে পারে বিকল্প : মেয়র আতিকুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

আতিকুল ইসলাম
ফাইল ছবি

রাজধানীতে নিয়মিত যানজটের যে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে, এই সমস্যার সমাধানে খালগুলোকে উদ্ধার করে নৌকা চলাচল করানোর বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

শনিবার সকালে রাজধানীর শ্যামলীতে শ্যামলী পার্কে উন্নয়নকৃত ‘সাতটি পার্ক ও মাঠের উদ্বোধন’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

universel cardiac hospital

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ‘উন্মুক্ত স্থানগুলোর আধুনিকায়ন উন্নয়ন ও সবুজায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় উন্নয়নকৃত সাতটি পার্ক ও মাঠের উদ্বোধন করেন মেয়র।

মেয়র আতিকুল বলেন, আবারও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। খালে প্রচুর এডিস মশার জন্ম নিত। কিন্তু এখন খালে নৌকা চলাচল করছে। যখন আমরা নৌকায় চলাচল করব তখন খালের পানি চলমান থাকবে আর ডেঙ্গু জন্ম নিতে পারবে না। কিন্তু আমরা খালগুলোকে দখল করে নোংরা আবর্জনা ফেলে এমন অবস্থা করেছি ওখানে আর মাছের চাষ হয় না। ওখানে এখন মশার চাষ হয়। এটা বাস্তব সত্য কথা।

যানজটের কথা উল্লেখ করে মেয়র বলেন, আজকে ঢাকা শহরে যে যানজট সেই যানজট যদি অবমুক্ত করতে হয় তাহলে আমি মনে করি যেটা প্রকিৃতির দান সেই খালগুলোকে যদি আমরা উদ্ধার করে ইমিডিয়েটলি সেখানে নৌযান চালু করতে পারি তাহলে ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম অনেক অংশে কমে যাবে। এজন্য এই খালগুলোকে আমাদের উদ্ধার করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

আতিকুল ইসলাম বলেন, আমি কিছুদিন আগে রাজউকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেছি। আমি তাদের বলেছি, অনেক ডেভলপার প্রতিষ্ঠান ডিজাইনে দেখিয়েছে খেলার মাঠ, শিশুদের জন্য পার্ক, বাজার, কবরস্থান। কিন্তু যখন তারা দেখল জায়গার দাম অনেক বেশি হয়ে গেছে, তখন সেখানে খেলার মাঠের, পার্কের জায়গাসহ সব প্লট হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমি যখন তাদেরকে ফোন করে বললাম যে আপনারা খেলার মাঠ, পার্ক দেখালেন, কিন্তু এগুলো কই? তখন তারা আমাকে ফোন করে বলেন মেয়র সাহেব, আমরা খেলার মাঠ এবং পার্কের প্লট এখনও কিনতে পারিনি।

ডেভেলপারদের উদ্দেশে মেয়র বলেন, ড্রেজার দিয়ে আপনারা বালি ভরাট করতে থাকেন। ওগুলো তো আপনাদের জায়গা না। ওই খালতো জনগণের জায়গা, ওই খাল দিয়ে তো নৌকা চলবে। কিন্তু আমি দেখেছি আজকে বসিলা থেকে কিভাবে এই খাল দখল হয়ে যায়। বসিলা গিয়ে দেখলাম কিভাবে রামচন্দ্রপুর খাল দখল হয়ে ওখানে খেলার মাঠ হয়ে গেছে।

অনুষ্ঠানে ঢাকা ১৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. সাদেক খান ও আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে মেয়র বলেন, আপনারা আমাকে সাহায্য করেছেন। তাই খাল উদ্ধার করতে সফল হয়েছি। আজ সেই রামচন্দ্রপুল খাল দিয়ে এখন নৌকা চলাচল করে।

খালগুলোর অবস্থা বর্ণনা করে মেয়র আতিক বলেন, আমরা দেখেছি উদ্ধার করা খালের মধ্যে এমন কিছু নাই যে ফেলা হয়নি। জাজিম থেকে শুরু করে চটের বস্তা, বালিশ যা কিছু আছে সব কিছু খালের মধ্যে ফেলা হয়েছে।

শহরে খালপারের সব বাড়ি খালের দিককে পেছনে রেখে তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান মেয়র। তিনি নগরবাসীকে খালের দিক সামনে রেখে বাড়ি তৈরির আহ্বান জানিয়ে বলেন, যখন আমরা খালের দিকে মুখ দিয়ে বাড়ি তৈরি করবো তখন খালগুলো পরিস্কার থাকবে।

তিনি আরও বলেন, আমাকে কথা দিয়েছেন রাজউকের চ্যেয়ারম্যান ঈদের পর সমস্ত ড্রইং দেবেন। আমরা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবো, প্রতিহত করবো। তারা আরামে থাকতে পারবে না। তাদের ঘুম আমি হারাম করে দেবো, কারণ তারা নগরবাসীর ঘুম হারাম করে দিয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা ১৩ আসনের সংসদ সদস্য মো. সাদেক খান। সাতটি পার্ক ও মাঠের উন্নয়ন কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য ডিএনসিসি মেয়রকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য এই পার্ক ও মাঠগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক সুবিধা সম্বলিত পার্ক ও মাঠগুলো পেয়ে আমরা সত্যি আনন্দিত। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমরা সবসময় ডিএনসিসির পাশে আছি।

৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি স্থপতি ইকবাল হাবিব, ডিএনসিসির কাউন্সিলর এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

শেয়ার করুন