ইসির সঙ্গে সংলাপে যা বললেন সাংবাদিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দেশের ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা। এর আগে প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, বিশিষ্ট নাগরিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে তিন দফা সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন।

আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এদিন বেলা ১১টায় বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রধান নির্বাহীসহ সাংবাদিকদের নিয়ে ইসির চতুর্থ ধাপের সংলাপ শুরু হয়।

সংলাপে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল ইসির উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। সেটিই আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম। আপনারা জানেন আপনাদের কাজটা কী? ডানে-বামে কিছুই নেই ভালো নির্বাচন করা ছাড়া। সহিংসতা না ঘটানো নিশ্চিত করা, সবাই যেন নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেয় সেটা নিশ্চিত করা। নির্বাচন কমিশন হতভাগা প্রতিষ্ঠান। যারাই হেরেছে তারাই কমিশনকে দোষ দিয়েছে। কাজেই আপনারা হতভাগা প্রতিষ্ঠানে এসেছেন।

তিনি বলেন, আস্থার সংকট দূর করা দরকার। এনআইডি যদি সংশোধন না করেন, তাহলে কিন্তু অসংখ্য মানুষের খুনের দায়ে দায়ী হবেন। প্রার্থীদের হলফনামা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার জন্য আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। সেটা প্রকাশ করা উচিত। তাহলে একজন প্রার্থীর অবস্থান তুলনা করা যায়।

একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, ৫০ বছর পরও নির্বাচন কমিশন বিতর্কিত। কখনো কখনো দলগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে ইসিকে বিতর্কিত করেছে। এটা একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। আপনাদের এটার ঊর্ধ্বে থাকতে হবে। সবচেয়ে ভালো ইসি যাকে আমরা বলি, সেটা হচ্ছে ড. শামসুল হুদা কমিশন। সেই কমিশন বিএনপিকে ভাঙার জন্য মেজর হাফিজের নেতৃত্বাধীন অংশকে ধানের শীষ প্রতীক দিতে চেয়েছিল।

তিনি বলেন, এটিই বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্যতম নির্বাচন কমিশন ছিল। কাজেই পারসেপশন একটা অদ্ভুত খেলা। শামসুল হুদা ও সাখাওয়াত হোসেনের মতো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা আর কারও ছিল না। কাউকে নির্বাচনে আনা বা না আনা, দল ভাঙার কাজ তো আপনাদের নয়। চোখ-কান বন্ধ করে সোজা পথে হাঁটেন। বড় দলগুলো না এলে একতরফা হয়ে যায়। এর বাইরে কাউকে আনা বা না আনা আপনাদের কাজ নয়।

নিউজ ২৪-এর নির্বাহী সম্পাদক রাহুল রাহা বলেন, নির্বাচনকালীন মিথ্যা প্রচার, অপপ্রচার রোধে নজরদাবি জরুরি। ভোট নিয়ে আস্থা ফেরাতে বড় দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এমডি আবুল কালাম আজাদ বলেন, কথায় কথায় ইসিকে পদত্যাগের কথা বলা হয়। পদত্যাগে বাহাদুরির কিছু নেই। ভোটে আসা না আসা দলগুলোর নিজের সিদ্ধান্তের বিষয়। জামাই আদর করে কাউকে ডেকে আনা হবে না।

নাগরিক টিভির হেড অব নিউজ দীপ আজাদ বলেন, নির্বাচন কমিশনকে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, চাইলে সেই ক্ষমতা বলে সুষ্ঠুভাব নির্বাচন করতে পারে। তবে সেই ক্ষমতা তারা ব্যবহার করতে চায় কি না, এটা একটা বড় প্রশ্ন? ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে কে থাকবে পুলিশ নাকি প্রিসাইডিং অফিসার। গণমাধ্যমের জন্য সবচেয়ে বড় একটি বাধা হয়ে দাঁড়ায় যখন পুলিশ ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকে। কাজেই প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কর্তৃত্ব নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, সবাই নির্বাচনে আসবে, সাধারণ মানুষকে বিশ্বাস করতে হবে, রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জন করতে হবে। আরেকটি কথা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে এটিই আপনাদের পেশাগত জীবনের শেষ অ্যাসাইনমেন্ট। এরপর হয়তো আর কোনো রাষ্ট্রীয় কাজ পাবেন না। এটি মাথায় রেখে কাজ করলে ভালো কিছু করতে পারবেন।

বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব নিউজ মাসুদ কামাল বলেন, মূল সংকটটি কোথায় তা ভালো বোঝেন বলেই আপনারা দায়িত্বটা নিয়েছেন। না বুঝলে হয়তো দায়িত্ব নিতেন না। আরও কিছু বোঝার জন্য এই সংলাপ করছেন। নির্বাচন কমিশনের সবচেয়ে বড় সংকট হলো আস্থার সংকট। মানুষ নির্বাচন কমিশনের কথা বিশ্বাস করে না। গত দুটি নির্বাচনে এই বিশ্বাস শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে।

তিনি বলেন, যদি প্রত্যেক নাগরিককে ভোট দেওয়া নিশ্চিত করতে পারেন তাহলে বুঝবো আপনি সফল। এ বিষয়টি আপনি অর্জন করতে পারবেন কি না তাই মুখ্য বিষয়।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন এনটিভির বার্তাপ্রধান জহিরুল আলম, চ্যানেল আইয়ের প্রধান বার্তা সম্পাদক জাহিদ নেওয়াজ খান, আরটিভির সিইও সৈয়দ আশিক রহমান, একুশে টিভির হেড অব নিউজ রাশেদ চৌধুরী, বাংলাভিশনের হেড অব নিউজ আব্দুল হাই সিদ্দিক, মাইটিভির হেড অব নিউজ শেখ নাজমুল হক সৈকত, সময় টিভির হেড অব নিউজ মুজতবা দানিশ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির চিফ নিউজ এডিটর আশিস সৈকত, মাছরাঙা টিভির হেড অব নিউজ রেজোয়ানুল হক রাজা, চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন, দেশ টিভির চিফ নিউজ এডিটর বোরহানুল হক সম্রাট, ডিবিসি নিউজের সিইও মঞ্জুরুল ইসলাম, গ্লোবাল টিভির এডিটর সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, সাংবাদিক মোস্তফা ফিরোজ, যমুনা টিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম আহমেদ, স্পাইস টিভির এডিটরিয়াল হেড তুষার আব্দুল্লাহ।

শেয়ার করুন