গ্রামভিত্তিক উন্নয়নের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

তৃণমূল ও গ্রামভিত্তিক উন্নয়নের জন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রযুক্তি পরিবর্তনশীল। তাই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযুক্ত জনশক্তি যাতে গড়ে ওঠে, তার ব্যবস্থাও আমরা নিয়েছি।

আজ বৃহস্পতিবার ‘ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিটাক, বিসিক ও বিএসইসি কর্তৃক সমাপ্ত চারটি প্রকল্পের’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র ও ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানায় অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

universel cardiac hospital

সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তনয়া শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, এটা ঠিক, আমাদের অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক। শিল্পায়নও আমাদের প্রয়োজন। এটা কর্মসংস্থান ও রপ্তানি করার সুযোগ সৃষ্টি করে। পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, যাতে আমাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হয়।

বাসস জানায়, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঘোড়াশাল থেকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেমিক্যাল ইন্ডাস্টিজ কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান শাহ ইমদাদুল হক।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা বিআইসিসি থেকে বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকিও বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রকল্পগুলোর ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে শিল্পমন্ত্রণালয় প্রকাশিত শিল্পায়নের ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারার ওপর একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ আমাদের বারবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে বলেই, আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি।

তিনি বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল ১৫ হাজার ৫৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর ২০২০-২১ অর্থবছরে তা ৪৫ হাজার ৩৮৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে ২০২টি দেশ বা অঞ্চলে ৭৬৬টি পণ্য রপ্তানি করতে পারছি।

কৃষিপণ্য খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে সরকারের গুরুত্ব দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাদ্য উৎপাদনে আমরা যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছি। গবেষণার মাধ্যমে আমরা নতুন নতুন ক্ষেত্রে খাদ্য, ফলমূল, তরিতরকারি, মাছ, ডিম, মাংস উৎপাদন করতে সক্ষম হচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশব্যাপী পরিবেশবান্ধব শিল্পের প্রসার ঘটাচ্ছি। আমাদের পরিবেশ রক্ষা করা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করে। তাই আমরা প্রতিটি শিল্প, কলকারখানা থেকে শুরু করে যত প্রতিষ্ঠান তৈরি করছি, সেটা পরিবেশবান্ধব যেন হয়, তার ব্যবস্থা নিচ্ছি। পরিবেশ-প্রতিবেশের প্রতি লক্ষ রেখেই পদক্ষেপ নিয়েছি।

ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক সহায়তা দেওয়ায় চীন ও জাপানকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, নতুন এই সার কারখানায় দৈনিক ২ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন ও বার্ষিক প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদন হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কার্বন-ডাই অক্সাইড থেকে ১০ শতাংশ ইউরিয়া উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পোন্নয়নে আমরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ফলে বর্তমানে শিল্পনগরীতে (বিসিক) বিনিয়োগের পরিমাণ ৪১ হাজার ২১৭ কোটি টাকা এবং ৮ লাখের অধিক লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

সরকারপ্রধান বলেন, ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি) লাইটিং সামগ্রী উৎপাদনকারী একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান, যা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি উন্নত, গুণগত মানসম্পন্ন ফ্লোরেসেন্ট টিউবলাইট, সিএফএল বাল্ব, এলইডি বাল্ব ও এলইডি টিউবলাইট উৎপাদন ও বাজারজাত করে আসছে।

তিনি বলেন, বিএসইসির অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন টিউবস লিমিটেডের উদ্যোগে এলইডি লাইট অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্ট জন ইটিএল স্থাপনের ফলে এর উৎপাদিত পণ্য বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। ডেলটা প্ল্যান আমরা প্রণয়ন করেছি। ফলে জলবায়ু অভিঘাত থেকে রক্ষা পাবে বাংলাদেশ। উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রেখে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন উন্নত জীবন পায়, তা নিশ্চিত করবে।

সরকারপ্রধান বলেন, করোনাভাইরাস সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করেছে। খাদ্যের অভাব সৃষ্টি করেছে। তবে বাংলাদেশে আমাদের গৃহীত পদক্ষেপ, প্রণোদনা ও নগদ অর্থসহায়তার মাধ্যমে আমরা আমাদের অর্থনীতির গতি সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি।

শেয়ার করুন