ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সমঝোতা, খুলবে নিউমার্কেট

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানী ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় বন্ধ হয়ে যাওয়া দোকানপাট ব খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বুধবার (২০ এপ্রিল) দিবাগত রাতে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী, ঢাকা কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের যৌথ বৈঠকে আজ বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) থেকে চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও নিউ সুপার মার্কেটে, চাঁদনী চক মার্কেটসহ আশেপাশের বন্ধ থাকা মার্কেটগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

universel cardiac hospital

বৈঠকে দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ও নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হন ব্যবসায়ীরা।

এ সময় দোকান মালিক সমিতি ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী, উভয় পক্ষই যার যার অবস্থান থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অঙ্গীকার করেন।

এর আগে, বুধবার (২০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ঘটনায় ঢাকা কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করে আহত করেছে, এমন খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করেন। কিন্তু সেখানে হামলা করেন ব্যবসায়ীরা।

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন

সোমবার (১৮ এপ্রিল) রাতেই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে সরে গেলেও মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) ফের ব্যবসায়ীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। পুরো ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল অভিযোগ করে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান, অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদ ও নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা স ম কাইয়ূমকে প্রত্যাহারের দাবি করেন।

এছাড়া তদন্ত সাপেক্ষে এই হামলার উসকানিদাতা, ইন্ধনদাতা ও হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান; আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার দায়ভার নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নেওয়া; হকারদের হামলায় নিহত পথচারী নাহিদ হাসানের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ; প্রতিটি মার্কেট ও দোকানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন; ক্রেতা হয়রানি, নারীদের যৌন হয়রানি বন্ধে একটি বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করে ক্রেতাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ১০ দফা দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।

নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের হামলার শিকার অ্যাম্বুলেন্স।

তার আগে, রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার দোকানপাট বুধবারই খুলে দেওয়া হবে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই ব্যবসায়ী দেওয়ান শাহীনের এই ঘোষণা ভালভাবে নেননি শিক্ষার্থীরা এবং এর প্রতিবাদে আবারও তারা রাস্তায় নেমে আসেন। এ সময় ঢাকা কলেজ ও নিউমার্কেট এলাকায় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে মার্কেট খোলার চেষ্টা ভেস্তে যায় ব্যবসায়ীদের। তারই পরিপেক্ষিতে বড় ক্ষতির আশঙ্কায় বুধবার রাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বৈঠকে বসেন নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা।

প্রসঙ্গত, সোমবার (১৮ এপ্রিল) দিবাগত রাতে দুই দোকানীর মধ্যে বিবাদ থেকে সূত্রপাত হয় ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ। মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নিউমার্কেট এলাকা। ঘটনার দিন কামরাঙ্গীরচরের বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন নাহিদ। এ সময় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত হন তিনি। ময়নাতদন্তে তার শরীরে বেশকিছু ক্ষত পাওয়া গেছে। এতে স্পষ্ট তার ওপর হামলা হয়েছিল। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।

শেয়ার করুন