‘ভারতের পূর্ব সীমান্তে বাংলাদেশের মত বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র থাকার কারণে সেখানে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় আছে। অনুপ্রবেশ সমস্যাও অনেকটাই কম।’-বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।
শনিবার (২৩ এপ্রিল) আসামের রাজধানী গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে অতুলনীয় সেবা, ত্যাগ এবং সাহসিকতার জন্য রাজ্যটির বীর যোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে রাজনাথ সিং এ কথা বলেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে বাংলাদেশ গঠনের পর সবচেয়ে যদি কারও লাভ হয়ে থাকে তবে তা উত্তরপূর্ব ভারত। কেননা দেশের পশ্চিমাঞ্চল সীমান্ত বরাবর আমরা যে ধরনের উত্তেজনা দেখতে পাই, ওই ধরনের উত্তেজনাময় পরিবেশ বাংলাদেশ সীমান্তে কখনওই আমরা দেখতে পাই না। তার কারণ হল বাংলাদেশ আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। একটা সময় এই সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের সমস্যা ছিল কিন্তু সেটাও এখন প্রায় নেই বললেই চলে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে এখন শান্তি ও স্থিতিশীলতা দুটোই বিরাজ করছে। আর আমার মনে হয় এর কারণ ভারতের কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে যে মেলবন্ধনের কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে আগের চেয়ে বর্তমান সময়ে উত্তরপূর্ব ভারত অনেক বেশি উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
সম্প্রতি উত্তরপূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে সেনাবাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া ‘আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ারস অ্যাক্ট’ (আফস্পা) প্রত্যাহারের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, আমি যখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলাম সেসময় মেঘালয়, অরুণাচলপ্রদেশ থেকে ওই আইন প্রত্যাহার করা হয়েছিল। সম্প্রতি অসমের ২৩ টি জেলা এবং মণিপুর ও নাগাল্যান্ডের ১৫ টি করে মোট ৩০ টি পুলিশ থানার অধীন এলাকা থেকেও ওই আইন তুলে নেওয়া হয়েছে। ওইসব অঞ্চলগুলিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরে আসার কারণেই এই আইন প্রত্যাহার করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, মানুষের মধ্যে একটা ভুল ধারনা আছে যে সেনাবাহিনী হয়তো সবসময়ের জন্য তাদের হাতে এই ক্ষমতা রেখে দিতে চায়। কিন্তু তা নয়। সেনাবাহিনী কখনও চায় না যে আফস্পা লাগু করা হোক। আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দেখাটা সেনাবাহিনীর কাজ নয়। সেটা দেখে রাজ্য পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যরা। সত্যি টা হল এই যে ওই অঞ্চলের পরিস্থিতির ওপর বিচার করেই এই আইন লাগু করা হয়। এমনকি সেনাবাহিনীর তিনটি শাখাই (স্থল, বিমান, নৌ) চায় যে জম্মু-কাশ্মীর থেকেও ওই আইন প্রত্যাহার করা হোক। কিন্তু কোনো কারণে যদি ওই আইন লাগু করা হয়, তার জন্য দায়ী সেখানকার গম্ভীর পরিস্থিতি, এর জন্য সেনাবাহিনী কোনো অংশেই দায়ী নয়। দেশবাসীর এটা বোঝা উচিত।
এসময় সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধেও কঠোর বার্তা দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ। তিনি বলেন, দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ মুছে ফেলতে মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার কাজ করে চলেছে। আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ যে দেশের মাটি থেকে সন্ত্রাসবাদকে শক্তভাবে মোকাবিলা করা হবে। কিন্তু বাইরে থেকেও দেশের ওপর কোন হামলা হলে সেক্ষেত্রে আমরা সীমান্ত অতিক্রম করে সেদেশের মাটিতে গিয়ে সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করতে কোন দ্বিধা করব না।
এদিনের ওই অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যটির রাজ্যপাল জগদীশ মুখী, মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, ভারত সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ সম্মাননা প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্ণেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ জহির, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী প্রমুখ।