এমানুয়েল মাখোঁ ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এরপর তিনি দেশটিতে দ্রুত উদারপন্থীদের নেতা হিসেবে পরিচিতি পান। সে সময় তিনি ছিলেন বয়সে তরুণ, বুদ্ধিমান ও প্রচণ্ড যুক্তিবাদী। তখন সময়টাও ছিল উদারপন্থীদের জন্য দুঃস্বপ্নের, আতঙ্কের।
আগের বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যেতে (ব্রেক্সিট) ভোট দেন যুক্তরাজ্যের জনগণ। তখন যুক্তরাষ্ট্রেও সবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউরোপজুড়েই জনতুষ্টিবাদীদের হচ্ছিল জয়জয়কার; এমনকি সুইডেন, ডেনমার্ক ও জার্মানির মতো দেশেও।
এদিকে কট্টর বামপন্থীরা ওই সময় গ্রিসের ক্ষমতায়। আর ইতালিতে ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছিল ডানপন্থী রক্ষণশীল দল নর্দান লিগ। একই সময় উন্নত বিশ্বের রাজনীতিবিদ যাঁরা একটি বলয় গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ উপেক্ষা করতেন এবং অতীতের কাল্পনিক সোনালি যুগে ফিরে যেতে চাইতেন, তাঁরা উঠতির দিকে ছিলেন।
এ পরিস্থিতিতে ইউরোপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেশ ফ্রান্সে উদারপন্থী মাখোঁর জয় যে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে তা কোনো আশ্চর্যের বিষয় ছিল না। ইকোনমিস্টের এক নিবন্ধে তাঁর সম্পর্কে এভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ফ্রান্সে মাখোঁর নেওয়া নানা উদ্যোগ কর্মসংস্থান তৈরি ও নতুন ব্যবসার পথ খুলে দিয়েছে। বাড়তি চাকরির সুযোগ সৃষ্টির চেয়ে প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। ইউরোপে নেক্সট জেনারেশন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তহবিল গঠনের পেছনেও তাঁর ভূমিকা ছিল।
১০ এপ্রিল মাখোঁ আবার ভোটারদের মুখোমুখি হয়েছেন। প্রথম দফার ওই ভোটে উদারপন্থার প্রতি নিজের সহজাত আকাঙ্ক্ষার বিষয়টি কাজে লাগাননি তিনি। এর পরিবর্তে তিনি নিজেকে একজন সংস্কারক, বিশ্বের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির ধারক ও ফ্রান্সের রাজনীতিকে পুনরায় জাগিয়ে তুলতে সক্ষম এমন একজন নেতা হিসেবে তুলে ধরেন।
ইকোনমিস্টের দেওয়া পূর্বাভাস মতো নির্বাচনের প্রথম ধাপে উতরে গেছেন মাখোঁ। একই পূর্বাভাস বলছে, দ্বিতীয় ধাপেও তাঁর নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা ৭৮ শতাংশ। এমনটি হলে তা হবে মাখোঁর জন্য একটি যুগান্তকারী অর্জন। কারণ, ১৯৬৫ সালে সর্বশেষ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফ্রান্সে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছিলেন শার্ল দ্য গল।