মহামারিকালে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা কমেছে দিনে আট ঘণ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি
ফাইল ছবি

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার প্রভাব প্রাথমিকভাবে ‘সীমিত’ মনে হলেও ভবিষ্যতে এর প্রভাব ‘সুদূরপ্রসারী’। স্বাভাবিক সময়ে শিক্ষার্থীরা গড়ে ১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করলেও মহামারীকালে তারা পড়েছে দিনে মাত্র দুই ঘণ্টা। অর্থাৎ তাদের দিনে পড়াশুনা কমেছে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৮ ঘণ্টা।

এছাড়া মহামারির মধ্যে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সম্পূর্ণ বিকল্প হতে পারেনি অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম। অনলাইনে ক্লাসের জন্য ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট সংযোগ ছিল না। এমনকি ১১ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনলাইন ক্লাস সম্পর্কে ধারণাই ছিল না।

শনিবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর একটি অভিজাত কনভেনশন সেন্টারে ‘শিক্ষার বাজেট, বাজেটের শিক্ষা: বাজেটের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, কোথায় আছি আমরা’শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।

ইউনিসেফের সহযোগিতায় সেমিনারটির আয়োজক ছিল গণসাক্ষরতা অভিযান, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ ও এডুকেশন ওয়াচ।

গণসাক্ষরতা অভিযানের এক জরিপে দেখা যায়, ২০২১ সালে করোনাভাইরাস প্রকোপের মধ্যে ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর অনলাইনে সংযোগ না থাকায় তারা ক্লাস করতে পারেনি। এমনকি অনেকের পরিবারে একটি মোবাইলফোন থাকলেও ক্লাসের সময় তারা সঠিক সময়ে ক্লাস করতে পারেননি। অধিকন্তু ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী দূরবর্তী শিক্ষাকে ‘আনন্দদায়ক’ বা ‘উপকারী’ মনে করেনি।

মহামারির সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৮ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইনে ক্লাস করতে পারেনি। আর মাধ্যমিকে ক্লাস করতে পারেনি ৬৬ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়িতে ডিভাইস ছিল না ৫৭ দশমিক ৯ শতাংশের। ক্লাস চলাকালীন অভিভাবকের মোবাইলফোন ব্যবহার করতে পারেনি ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী। মোবাইলে ইন্টারনেটের খরচ মেটাতে পারেনি ২ দশমিক ৬ শতাংশ। অনলাইন ক্লাসকে সহায়ক মনে করেনি ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ। আর অনলাইন ক্লাস সম্পর্কেই জানে না ১১ শতাংশ। প্রাইভেট শিক্ষক বা কোচিং করতে পেরেছে মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী।

অন্যদিকে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অভ গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে জানায়, করোনা মহামারির আগে ক্লাস, বাড়িতে নিজস্ব পড়াশোনা এবং গৃহশিক্ষক সবমিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ১০ ঘণ্টা পড়াশোনা করত। কিন্তু মহামারীতে তা কমে হয় মাত্র ২ ঘণ্টা। যেসব অভিভাবকের তেমন পড়াশোনা নেই তাদের সন্তানরা আরও কম পড়াশোনা করেছে।

এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এক জরিপে জানায়, করোনায় লকডাউনের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীর তাদের শিক্ষকদের সঙ্গে সরাসরি কোনো যোগাযোগ ছিল না। এসময় ছাত্রদের থেকে ছাত্রীদের সঙ্গে শিক্ষকদের যোগাযোগ বেশি ছিল। কারণ লকডাউনে অনেক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ে বন্ধ হওয়া ঠেকাতে শিক্ষকদের ভূমিকা ছিল।

এছাড়া দেশের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় প্রান্তিক অঞ্চলের দরিদ্রতম অংশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদের যোগাযোগ কম হয়েছে।

সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দেশের শিক্ষা খাতে বাজেট অনেক কম। এরই খাতে আামাদের বাজেট বাড়াতে হবে। এই খাতেই আমাদের সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা উচিত।’

সেমিনারে পিকেএসএফ চেয়ারম্যান ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ বলেন, ‘শিক্ষা নিয়ে অনেকদিন ধরে কাজ করছি। শিক্ষানীতিতে অনেক কিছুই আছে যা বাস্তবায়ন হয়নি এখনো এবং শিক্ষা আইন ছাড়া করা সম্ভবও নয়।’

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দোন ক্যাম্পেইন ফর এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। সেমিনারে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শিক্ষাবঞ্চিত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে সেগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানান।

শেয়ার করুন