ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী পূর্ব ইউরোপের দেশ মলদোভার স্বাধীনতাকামী ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলে ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২৫ এপ্রিল) ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার তিরাপসপোল শহরে পরপর দুটি বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ওই এলাকায় সোভিয়েত আমলের একটি রেডিও এন্টেনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনার পর এ অঞ্চলে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার পর জাতীয় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিষদ সুপ্রিম সিকিউরিটি কাউন্সিলে জরুরি বৈঠক ডাকেন মলদোভার প্রেসিডেন্ট মাইয়া সান্দু। ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার হামলা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাজ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বৈঠকের পর এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, উত্তেজনা বাড়াতে এ হামলা চালানো হয়েছে। হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনও।
ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, এ হামলা চালানো হয়েছে ইউক্রেন থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেছেন, তিরাসপোলের ৮ কিলোমিটার উত্তরে নভোলাদিমিরোভকা দিয়ে প্রবেশ করে ইউক্রেনের তিন অনুপ্রবেশকারী। এরপর তারা হামলা গ্রেনেড হামলা চালায় এবং তারপর নিরাপদে ইউক্রেনে ফিরে যায়। তবে নিজের এ দাবির সমর্থনে কোনো প্রমাণ দেননি তিনি।
খবরে বলা হয়, সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় তিরাসপোল শহরে দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে সাবেক সোভিয়েত আমলের রেডিও টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে মলদোভার কর্তৃপক্ষ ট্রান্সনিস্ট্রিয়ায় উত্তেজনা বৃদ্ধির যে কোনো প্রচেষ্টাকে স্পর্শকাতর হিসেবে দেখে। ইউক্রেনের সীমান্তে অবস্থিত ওই অঞ্চলে মস্কোপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আধিপত্য রয়েছে।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে এই ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলে স্থায়ীভাবে সেনা মোতায়েন রেখেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের আশঙ্কা, ট্রান্সনিস্ট্রিয়াকে ব্যবহার করে তার ভূমিতে হামলা চালানো হতে পারে।
চলতি সপ্তাহে রাশিয়ার কমান্ডার মেজর জেনারেল রুস্তম মিনেকায়েভের এক বক্তব্যের পর এ নিয়ে কিয়েভের শঙ্কা আরও বেড়েছে। ওই জেনারেল বলেন, ইউক্রেনের দোনবাস ও দক্ষিণাঞ্চল (মলদোভার ট্রান্সনিস্ট্রিয়া) পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতে চাই আমরা। এর মাধ্যমে ক্রিমিয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হবে, যা ২০১৪ সালে দখল করা হয়েছিল।’
লক্ষ্য সফল হলে এর মাধ্যমে মলদোভায় রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী অধ্যুষিত অঞ্চল ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলে প্রবেশাধিকার পেয়ে যাবে মস্কো। রুশ জেনারেলের এ মন্তব্যের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি এর আগে অসংখ্যবার বিষয়টি বলেছি— রাশিয়া অন্য দেশও দখল করতে চায়। ইউক্রেনে হামলা সে লক্ষ্যপূরণে চেষ্টার শুরু মাত্র।’
রুশ কমান্ডারের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মলদোভার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করে দেশটিতে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছিল। এরপরই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। যার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) সুপ্রিম সিকিউরিটি কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক আহ্বান করে মলদোভা।