বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেছেন, আপনারা ছিলেন ঘুর অন্ধকারে। সরাইলে সাথে ছিলেন (নির্বাচনী এলাকা)। তখন আপনাদের এমন একটা অবস্থা ছিল যে আপনারা নিজ মায়ের সন্তানও না আবার সৎ মায়ের সন্তানও না। সেই অবস্থা থেকে আপনাদেরকে পরিত্রাণ দিতে আমি উদ্যোগ নেওয়ার পর আমাকে অনেকেই সেদিন বলেছে, বুধল কিন্তু পাকিস্তান, এখানে বাংলাদেশ চলে-টলে না, এখানে বাংলাদেশ নামটা শুনলেও তারা মনে করে এটা ধর্মবিরোধী, আপনি এই ভুল কইরেন না, বুধলকে সদরের সঙ্গে আইনেন না। আমি তখন তাদেরকে বলেছি, বুধল যেহেতু ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার সাথে সংযুক্ত আমি এটাকে নিয়ে আসব।
‘আমি বুধলের তৎকালীন চেয়ারম্যান আলম, তালশহর পূর্বের চেয়ারম্যান আবুল কালাম, মজলিশপুরের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের সহযোগিতায় আপনাদেরকে অন্তত এই পরিচয় দিতে পেরেছি যে আপনারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের।’
১৫ মে (রোববার) প্রায় ১ কোটি ৬১ লক্ষ ব্যয়ে বুধল উচ্চ বিদ্যালয়ের ২য়, ৩য় ও চতুর্থ তলার উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ কাজের এবং বঙ্গবন্ধু কর্ণার ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণারের শুভ উদ্বোধন পরবর্তী আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বুধল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে বলতে গিয়ে মোকতাদির চৌধুরী বলেন, আমার বন্ধু অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির সাহেব ও মেজর জহির সাহেব তাঁরা দুইজন আমার কাছে গিয়ে বলেছিলেন- আমরা একটি স্কুল করতে চাই এবং সেখানে আপনার সহযোগিতা চাই। আমি তখন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব; আমি সেদিন বলেছিলাম- যেহেতু এটি বেসরকারি স্কুল, সরকারের এখানে কিছু শর্তাবলি আছে, সেই শর্তাবলি পূরণ করে আপনারা এগিয়ে যান, আমি আছি আপনাদের সাথে। আমি আমার প্রতিশ্রুতি মতো যতটা সহযোগিতা করা প্রয়োজন সবধরনের সহযোগিতা করেছি এবং ২০০০ সালে এই স্কুলটিকে আমি এমপিওভুক্ত করে দিই।
তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পরে আপনাদের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করিনি, একথা আপনারা বলতে পারবেন না। কিন্তু কী লাভ এতো উন্নয়ন করে? আমি ভোটের কথা বলব না, কেননা ভোট আপনারা দেন নাই, আমি জানি ভবিষ্যতেও আপনারা দিবেন না। কারণ আপনারা এখনও পাকিস্তানে আছেন। কতিপয় লোক আপনাদেরকে পাকিস্তানের অবাস্তব স্বপ্ন দেখায়, যেটা কখনোই বাস্তব হবে না। আমি যেমন বেকুবের মতো আপনাদেরকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাথে যুক্ত করেছি, আপনারাও বেকুবের মতো ঐ লোকগুলোর কথা শুনে পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখেন।
প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আমি একটু টক-ঝাল কথা বলি, অনেকের জন্য এটা অসুবিধা হয়। যেমন আমি মিথ্যাবাদীদের মিথ্যাবাদী বলি, সে যত বড় লম্বা জুব্বাই পড়ুক না কেন বা যত বড় লম্বা দাঁড়ি রাখুক না কেন, সে যদি মিথ্যা কথা বলে, আমি তাকে মিথ্যা বলি। যেমন আমার নামে তারা মিথ্যা কথা বলেছিল, যে আমি মাদ্রাসায় আক্রমণ করেছি। আমি মিথ্যা কথা বলি না, ইনশাআল্লাহ আপনাদের দোয়ার বরকতে মিথ্যার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। যারা লম্বা দাঁড়ি, টুপি,জুব্বা পড়ে মিথ্যা কথা বলে তাদের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নাই। আমি ঐসব মিথ্যাবাদীদেরকে ঘৃণা করি।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, আমি কন্যা সন্তানের পিতা, কন্যা সন্তানের মর্যাদা আমি বুঝি, আমাদের নবী রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কন্যা সন্তানের পিতা ছিলেন। সুতরাং কন্যা সন্তানের মর্যাদা আমার কাছে দুর্বলতা। কোরআনেও কন্যা সম্পর্কে বলা আছে। সুতরাং কন্যা যেখানে আছে সেখানে আল্লাহর রহমতও সেখানে আছে। কন্যারা যেখানে আছে উন্নয়ন সেখানে আছে। কন্যারা যদি উন্নয়নের অংশীদার হয়, উন্নয়নে নেতৃত্ব দেয়, তখন দেশের চেহারা পাল্টে যায়। কাজেই কন্যাদের পড়াবেন, যাতে তারা পড়াশোনা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
তিনি বলেন, এখন বিজ্ঞানের যুগ, কন্যাদের বিজ্ঞান শিক্ষায় যুক্ত করবেন, বিজ্ঞান আপনাকে সামনে এগিয়ে দিবে।কোরআনের পরতে পরতে বিজ্ঞানের কথা বলা আছে। আমরা যারা কোরআন পড়ি তারা বিজ্ঞানের যে ব্যবহার সে সম্পর্কে অজ্ঞ,আমরা জানি না, যেজন্য একসময়কার বড় বড় বিজ্ঞানীদেরকে আমরা বাতেল বলে ফতোয়া দিয়েছি। ইবনে, শেখ সাদী থেকে আরম্ব করে অনেককে আমরা বাতিল বলেছি, এই অবস্থা যাতে আর না হয়।
খাল ভরাট করে ফোর লেন রাস্তা নির্মাণের প্রসঙ্গ টেনে মোকতাদির চৌধুরী বলেন, বিসিক শিল্পনগরী পানির নিচে চলে গেছে, অথচ সরকার পরিচালনায় যারা আছেন জনগণের কথা আপনারা সারাক্ষণ বলেন, এটা করছেন জনগণের জন্য, ঐটা করছেন জনগণের জন্য; তাহলে আপনাদের জনগণের তালিকার ভিতরে কী আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনগণ নয়? যদি আপনাদের জনগণের তালিকার ভিতরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদরের জনগণ আমরা থেকে থাকি, বিশেষ করে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলব-আপনি তো দয়াময়ী, আপনি তো মমতাময়ী, আপনার অনেক বিশেষণ, আমি কোনো বিশেষণই বলব না, আমি বলব আপনি জনগণের নেতা, জনগণের প্রতি আপনার দায়িত্ব আছে, জনগণের প্রতি আপনার কর্তব্য আছে, বুধলের এই স্কুলের ভবনের উদ্বোধনে এসে আপনার কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে ফোর লেনের পাশ দিয়ে ইফেক্টিভ চ্যানেল সিস্টেম করে তারপর আপনারা ফোর লেনের বাকি কাজটুকু করুন।
তিনি আরও বলেন, ফোর লেনের পাশ দিয়ে ইফেক্টিভ চ্যানেল সিস্টেম চালু না করা হলে বুধলের যে বিশাল জনগোষ্ঠী, যারা ফসল উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হবে, এখানকার মানুষ যখন না খেয়ে মারা যাবে, তখন বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ আর উন্নয়নের রোল মডেল থাকবে না। সুতরাং ডিসি সাহেব, এসপি সাহেব আপনারা জরুরি ভিত্তিতে এই সমস্যার কথা সরকারকে জানান, আর না হয় আমি জনতার সাথে আছি, তারা যে একশনে যাবে আমি তাদের সাথে থাকব।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইয়ামিন হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট লোকমান হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম মাহবুব আলম প্রমুখ।