নাঈমের সেরা বোলিংয়ের পর তামিম–মাহমুদুলের উড়ন্ত সূচনা

ক্রীড়া ডেস্ক

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শেষ বিকালের আলোয় করতালির আওয়াজ ভেসে আসছিল। তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল হাসানের ব্যাটিংয়ে দর্শকদের সন্তুষ্ট মনে হলো। ১৯ ওভারে বিনা উইকেটে ৭৬ রানে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ।

দিনের খেলার শেষ ভাগে উইকেট হারানোর ‘বদঅভ্যাস’ এড়িয়ে হাসিমুখেই মাঠ ছেড়েছেন দুই ওপেনার। তবে মাথায় থাকবে কালকের দিনটা—এই টেস্টে কে থাকবে চালকের আসনে, তা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যাবে কাল তৃতীয় দিনের খেলায়।

শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংস থেকে ৩২১ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। তামিম-মাহমুদুল জানেন, কাজ কেবল শুরু। শেষের আগে এখনো অনেক পথ। ৫ চারে ৬৬ বলে ৩১ রানে অপরাজিত মাহমুদুল। ৪ চারে ৫২ বলে ৩৫ রানে অপরাজিত তামিম।

সেই পথ শুরুর আগে মানে, বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামার আগে ম্যাচের পরিস্থিতি একরকম ছিল না। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৫৩ ওভারে ৩৯৭ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ৯০ ওভারে ৪ উইকেটে ২৫৮ রান তুলেছে প্রথম দিনের খেলা শেষে। অর্থাৎ, আজ দ্বিতীয় দিনে ৬৩ ওভার টিকেছে শ্রীলঙ্কার ইনিংস, ৬ উইকেটে রান উঠেছে ১৩৯।

বোলারদের প্রশংসা তাই করতেই হয়। বিশেষ করে নাঈম হাসান—১৫ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নেমে করেছেন টেস্টে নিজের সেরা বোলিং; ৩০-৪-১০৫-৬। সাকিব ৬০ রানে ৩ উইকেট নেন। জহুর আহমেদ চৌধুরীর ব্যাটসম্যানবান্ধব বাইশ গজে পেসারদের উইকেট নেই, ১০টি উইকেট ভাগ করেছেন তিন স্পিনার। সবচেয়ে বেশি ৪৮ ওভার বলা করা তাইজুল ইসলামের শিকার ১ উইকেট।

অথচ সকালের সেশনে খেলা যেভাবে চলছিল তাতে বাংলাদেশের রান পাহাড়ে চাপা পড়ার কথা ছিল। আগের দিনের দুই অপরাজিত অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস-দিনেশ চান্দিমাল ১৩৬ রানের জুটি গড়ে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। ফিল্ডিং পরিবর্তন করে চান্দিমালকে রিভার্স সুইপের লোভে ডুবিয়ে জুটি ভাঙেন নাঈম। সেটি মধ্যাহ্নভোজ বিরতির দুই ওভার আগে (১১৪)। সে ওভারে চান্দিমালের পর নিরোশান ডিকভেলাকেও তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে ভোজনে স্বাদ এনে দেন এই অফ স্পিনার।

দ্বিতীয় সেশনের পর দিনের খেলা শুরুর প্রথম ওভারেই শ্রীলঙ্কার ইনিংসের গতিপথ বেঁধে দেন সাকিব। রমেশ মেন্ডিস ও লাসিথ এম্বুলদেনিয়াকে টানা দুই বলে তুলে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন এই অলরাউন্ডার। তা না হলেও তখনই বোঝা গিয়েছিল, যে ইনিংস চার শ পেরিয়ে সাড়ে চার শ এমনকি পাঁচ শ-ও হতে পারে, সেটি চার শর মধ্যে বেঁধে ফেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ।

কিন্তু বেরসিক বিশ্ব ফার্নান্দো অন্য কিছু ভেবে রেখেছিলেন। একদম ‘কচ্ছপ কামড়’ বলে যা বোঝায়! নবম উইকেটে ১৪৭ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪৭ রানের জুটিতে বিশ্বর অবদান ৭৭ বলে ১৭। সাকিব, নাঈম, তাইজুলদের এ সময় টানা বল করিয়েও উইকেটের দেখা পাননি বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক।

চা-বিরতির আগে শেষ ওভারে পেসার খালেদ আহমেদের বাউন্সার বিশ্ব ফার্নান্দোর হেলমেটে লাগে। সাবধানতা হিসেবে শেষ সেশনে খেলার শুরুতে আর ব্যাটিংয়ে নামেননি তিনি। আসিতা ফার্নান্দো নেমে এক প্রান্তে অনড় হয়ে থাকা ম্যাথুসের সঙ্গে ৪৭ বলের জুটি গড়ে ফেললে আবারও ডাক পড়ে নাঈম হাসানের।

নাঈম এসে আসিতাকে বোল্ড করার তিন ওভার পরই ধৈর্যচ্যুতি ঘটে ম্যাথুসের। ওপাশে বিশ্ব ফার্নান্দো থাকলেও নাঈমকে স্লগ টানতে গিয়ে ক্যাচ দেন। মাত্র ১ রানের জন্য দ্বি-শতক পাননি, আউট হন ১৯৯ রানে। শ্রীলঙ্কাও অলআউট।

বাংলাদেশের শুরুটা ছিল সাবধানি। দ্বিতীয় ওভারেই আসিথা ফার্নান্দোর বলে দ্বিতীয় স্লিপে তামিমের ক্যাচ ফেলেন কুশল মেন্ডিস। বলটি অবশ্য ‘নো’ ছিল, তবে তামিম শুরুতে একটু নড়বড়ে হলেও পরে সামলে নেন সহজাত ব্যাটিংয়ে। দারুণ কিছু ড্রাইভও খেলেন অফ সাইডে। মাহমুদুল অন্য প্রান্তে আরও বেশি সাবধানি ছিলেন। শেষ সেশনে ১৯ ওভারে গড়ে ৪ রান করে তুলেছে বাংলাদেশ। ইতিবাচক ব্যাটিং তো বটেই। তবে কাল তামিম-মাহমুদুলের ব্যাটে অনেক কিছুই নির্ভর করছে।

শেয়ার করুন