শেষ শ্রদ্ধা জানানো ও দাফনের জন্য বাংলাদেশে আনা হবে অমর একুশের গানের রচয়িতা, সাংবাদিক, কথাসাহিত্যিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ। তাঁর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, তাঁকে রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্ত্রীর কবরের পাশে সমাহিত করা হবে। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিকদের প্রশ্নে লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজের পর পূর্ব লন্ডনের ব্রিক লেইন মসজিদে গাফ্ফার চৌধুরীর জানাজার নামাজ হবে। ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের বাতিঘর গাফফার চৌধুরীর প্রতি সর্বস্তরের মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মরদেহ লন্ডনের শহীদ আলতাব আলী পার্কে রাখার পরিকল্পনার কথাও জানান হাইকমিশনার। লন্ডনে এসব কার্যক্রম শেষ করে বাংলাদেশ বিমানের কার্গো ফ্লাইটে তাঁর মরদেহ দেশে পাঠানো হবে।
হাইকমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে গাফ্ফার চৌধুরীর মরদেহ আগামী সপ্তাহে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে যতো দ্রুত সম্ভব, ঢাকায় প্রেরণের জন্যে বাংলাদেশ হাইকমিশন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
দেশে এলে ভাষা সংগ্রামী আবদুল গাফফার চৌধুরীর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হবে বলে জানান হাইকমিশনার।
বাংলাদেশের ইতিহাসের বাঁক বদলের সাক্ষী আবদুল গাফফার চৌধুরী গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে লন্ডনের একটি হাসপাতালে মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি ডায়াবেটিস, কিডনি রোগসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। এক বছর ধরে প্রায়ই তাঁকে হাসপাতালে থাকতে হতো।
গাফ্ফার চৌধুরী লন্ডন থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে দীর্ঘ বছর নিয়মিত কলাম লিখে গেছেন। দেশের চলমান পরিস্থিতি ও ঘটনার ওপর নিবিড় পর্যবেক্ষণ বজায় রাখতেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে তাঁর কলম ছিল সোচ্চার। রাজনৈতিক ধারাভাষ্য আর সমকালীন বিষয়ের পাশাপাশি তিনি লিখে গেছেন অসংখ্য কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, স্মৃতিকথা ও প্রবন্ধ।
আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ছিলেন চার মেয়ে ও এক ছেলের জনক। তাঁর মেয়ে বিনীতা চৌধুরী ৫০ বছর বয়সে গত ১৩ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। হাসপাতালে থেকেই মেয়ের মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছিলেন তিনি। বিনীতা চৌধুরী বাবার সঙ্গে লন্ডনের এজওয়ারের বাসায় থাকতেন ও তাঁকে দেখাশোনা করতেন।
১৯৭৪ সালের ৫ অক্টোবর গাফ্ফার চৌধুরী তাঁর স্ত্রী সেলিনা আফরোজের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান। এরপর সেখানেই থেকে যান তিনি। তাঁর জন্ম ১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর, বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের উলানিয়া গ্রামে।
গাফ্ফার চৌধুরীর প্রথম উপন্যাসের নাম চন্দ্রদ্বীপের উপাখ্যান। নাম না জানা ভোর, নীল যমুনা, শেষ রজনীর চাঁদ, সম্রাটের ছবি, সুন্দর হে সুন্দর, বাংলাদেশ কথা কয় তাঁর লেখা বইগুলোর অন্যতম। তাঁর লেখা নাটকের মধ্যে রয়েছে পলাশী থেকে ধানমন্ডি, একজন তাহমিনা ও রক্তাক্ত আগস্ট।
সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ইউনেসকো পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মানিক মিয়া পদকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন গাফ্ফার চৌধুরী। সরকার তাঁকে একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করেছে।