পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ডাকে নতুন নির্বাচনের দাবিতে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থকদের রাজধানী ইসলামাবাদ অভিমুখে লংমার্চ (আজাদি মার্চ)। এই কর্মসূচি ঠেকাতে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) সরকার মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে লংমার্চকে ঘিরে দেশটির অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
ইমরান খানের লংমার্চ ব্যর্থ করতে পিএমএল-এন সরকার দমন–পীড়ন ও পিটিআইয়ের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের যে কৌশল হাতে নিয়েছে, সেটা বুমেরাং হতে পারে। এটি দেশটির রাজনৈতিক অচলাবস্থাকে আরও জোরালো করতে পারে। তবে পিএমএল-এন কেন মনে করছে যে এমন পরিস্থিতি পিটিআইয়ের বিরুদ্ধে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান পোক্ত করতে সহায়ক হবে, তা স্পষ্ট নয়। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের বিশ্লেষণে এসব কথা বলা হয়েছে।
শুরুর দিকে পিএমএল-এন সরকার ইঙ্গিত দিয়েছিল, তারা ইমরান খানকে নির্বিঘ্নে লংমার্চ করতে দেবে। তবে চলতি মাসের শুরুর দিকে সরকারের অবস্থান বদলে যায়। যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে বৈঠকে বসেন পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও তাঁর বড় ভাই নওয়াজ শরিফ।
দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর পিএমএল-এন সরকার ইমরানের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার কথা জানায়।
রাজধানী ইসলামাবাদ, লাহোর, করাচি ও রাওয়ালপিন্ডিসহ অন্যান্য বড় শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ইসলামাবাদে আসার প্রধান সড়ক অবরুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি ইসলামাবাদের ‘রেড জোনের’ নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর সাহায্য চেয়েছে শাহবাজ শরিফ সরকার। খবর প্রকাশিত হয়েছে, ইমরান খানকেও আটক করা হতে পারে।
পুলিশ পিটিআই নেতাকর্মীদের সঙ্গে বেশ কঠোর আচরণ করছে। এতে ক্ষোভ ছড়িয়েছে সরকারবিরোধীদের মধ্যে। মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে দুপক্ষ।
এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে ইমরান খান পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠার আগেই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার জন্য সরকারকে চাপ দিতে বিচার বিভাগ ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ইসলামাবাদ অভিমুখে লংমার্চ সফল করার বিষয়েও অনড় তিনি।
আগাম নির্বাচনের দাবিতে পিটিআই ও পিএমএল-এন সরকার মুখোমুখি অবস্থানে। বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতার এই দ্বন্দ্ব দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
বর্তমান সরকার ইতিমধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। সরকারের অল্প কয়েক দিনের কার্যক্রমে প্রমাণ হয়েছে, তারা প্রধান প্রধান চ্যালেঞ্জ, জনগণের সমালোচনা ও পিটিআইয়ের রাজনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষম নয়। নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে তাই পিএমএল-এন সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ জন্য প্রয়োজনে শক্তিপ্রয়োগেও তাদের আপত্তি নেই।
অন্যদিকে পিটিআই প্রধান ইমরান খান রাষ্ট্র ও সরকারের ওপর ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে কার্যত সফল হয়েছেন। এ জন্য যতই মূল্য চোকাতে হোক না কেন, ইঞ্চি পরিমাণ ছাড় দিতে রাজি নন তিনি। ইমরান খান বলেছেন, কোনো শক্তি আজাদি মার্চ ঠেকাতে পারবে না।
পাকিস্তানে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলোর এমন অনড় ও মুখোমুখি অবস্থান ভবিষ্যতে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেয় না। অনেকে মনে করছেন, এমন পরিস্থিতি দেশটির শক্তিশালী অগণতান্ত্রিক শক্তিকে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।