সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক শক্তি ও আমলাতন্ত্র কখনো পুলিশের পরিবর্তন চাইবে না। এটা পরিষ্কার কথা, আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা।
তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল চায়, তারা যা বলবে পুলিশ তাই করবে। সংসদ সদস্য চান, তিনি যা বলবেন, ওসি সেটাই করবেন। এসব চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে কাজ করা খুবই কঠিন।
আজ শনিবার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে নিজের লেখা ‘পুলিশ জীবনের স্মৃতি: স্বৈরাচার পতন থেকে জঙ্গি দমন’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক এই পুলিশপ্রধান বলেন, আমি রাজনৈতিক অপশক্তির কাছে মাথা নত করিনি। চেয়ার চেয়ে চাকরি করিনি, বদলি হয়েছে চলে গিয়েছি। চাকরিতে থাকা অবস্থায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পিছপা হইনি। তবে আমার মতো তো সবাই পারবেন না। এজন্য একটা সিস্টেম বা পদ্ধতি চালু করা উচিত, যাতে পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে।
তিনি বলেন, বিচারব্যবস্থার একটি অংশ পুলিশ। তারা যদি নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে না পারে, তাহলে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেম কখনো কার্যকর হবে না। পুলিশ নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে না পারলে সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব না। পুলিশকে ঢেলে সাজানোর কথা বলা হয়। তবে এটা পলিটিক্যাল কথা, কিভাবে ঢেলে সাজাতে হয়, সেটা আমি জানি না।
সাবেক পুলিশপ্রধান বলেন, পুলিশকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হলে আইনের সংস্কার প্রয়োজন। আমি দায়িত্বে থাকা কালে উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু তা আর হয়নি। সেখানে পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব যেমন ছিল, তেমনি পুলিশ কমপ্লেইন কমিশন গঠনেরও প্রস্তাব ছিল।
তিনি বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, একটি স্বাধীন স্বতন্ত্র সংস্থা সেটা তদন্ত করবে। কিন্তু সেটা হয়নি আমলাদের কারণে। আর রাজনীতিকরা তো চাইবেনই না রাজনীতিবিদ ও আমলাদের মন-মানসিকতার পরিবর্তন না ঘটলে সুশাসন কথাটা শুধু স্লোগানের মধ্যেই থাকবে।
এ কে এম শহীদুল হক বলেন, পুলিশকে অনেক বৈরী পরিবেশের মধ্যে কাজ করতে হয়। সবাই পুলিশের সেবা চান কিন্তু কেউ পুলিশকে পছন্দ করেন না। পুলিশকে ভয় পান কিন্তু পুলিশকে ভালো জানেন না। আমি বইতে লিখেছি, বাতাসের মধ্যে বসবাস করি বলে অক্সিজেনের অভাব অনুভব করি না।
তাঁর মতে, তেমনি সমাজে পুলিশ আছে বলে এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি না। সরকার যদি ঘোষণা দেয় দুই ঘণ্টার জন্য পুলিশের কোনো কার্যক্রম থাকবে না, তাহলে দেশে কি পরিস্থিতি হবে সেটা আমরা অনুভব করি না। পুলিশকে বুঝতে হলে পুলিশের কাছে যেতে হবে। পুলিশকে আস্থায় নিতে হবে। সেইসঙ্গে পুলিশকেও প্রচলিত উপনিবেশিক মন-মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দুটিরই পরিবর্তন দরকার।
বাংলা একাডেমির সভাপতি, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ নুরুল হুদা, কবি ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, বইটির প্রকাশক দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহ্ রুখ মহিউদ্দীন প্রমুখ।