বাংলা ভাষাকে আরও প্রযুক্তিবান্ধব করা প্রয়োজন

হীরেন পণ্ডিত

বাংলা ভাষা
প্রতীকী ছবি

সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বিশ্বের ৩৫ কোটি বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মাতৃভাষার রাজধানীতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বাংলা হবে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ভাষা। আগামী ৫০ বছরে বাংলা ভাষা কেবল জনসংখ্যার হিসাবেই নয়, ডিজিটাল প্রযুক্তিতে ব্যবহারের দিক থেকেও বাংলা হবে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম ভাষা। প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার প্রয়োগ সহজতর করতে ইতিমধ্যে সরকার ১৫৯ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৬টি টুলস উন্নয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

এই আধুনিক প্রযুক্তির যুগে বাংলা ভাষাকেও আধুনিক প্রযুক্তির ভাষা হতে হবে। নইলে বাংলাদেশ বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতির যুগে পিছিয়ে যাবে। বাংলা ভাষাকে এগোতে হবে। ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে হলে ভাষাবিদদের পাশাপাশি রাষ্ট্র ও প্রযুক্তিবিদদেরও সক্রিয় হতে হবে। ডিজিটাল জগতে বাংলা ভাষার ব্যবহার বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের বাংলা ভাষা সমৃদ্ধীকরণ প্রকল্পের আওতায় সফটওয়্যার ও টুলসের ব্যবহার শুরু হলে তা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে বাংলা ভাষাকে বৈশ্বিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ডিজিটাল ডিভাইসে আরো ভালোভাবে এবং সহজে বাংলা ভাষায় লেখাপড়া ও অনুবাদ সহজ হবে।

যেসব দেশ তথ্যপ্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রয়োগে এগিয়ে আছে, তারা সবাই প্রযুক্তিতে মাতৃভাষার ব্যবহার করছে। আমাদের দেশে প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার চর্চা হলেও এই মুহূর্তে বাংলায় ভালো কনটেন্টের অভাব রয়েছে। তাই দেশের ১৭ কোটির বেশি মোবাইল ফোন, ১৩ কোটিরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং ৫ কোটির বেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর কথা মাথায় রেখে মাতৃভাষায় ভালো ভালো কনটেন্ট ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে হবে। আর তা করা হলে শুধু অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও মানুষে মানুষে যোগাযোগ বৃদ্ধি, জ্ঞানার্জন এবং তথ্য ও সেবা পাওয়া নিশ্চিত করবে না, মাতৃভাষাকে বাঙালির মধ্যে চিরঞ্জীব করতে সহায়তা করবে।

আসকি ও ইউনিকোডের মধ্যে যে দেওয়াল আছে, তা ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে নীতিনির্ধারকেরা উল্লেখ করেন। দেরি করে হলেও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামে যোগ দিয়েছে ২০১০ সালে। তার পরও ইউনিকোড কনভার্সনে যে জটিলতা হয়, তার অপরাধ বাংলা ভাষাভাষীদের নয়; এই অপরাধ ইউনিকোডের। ইউনিকোডে বাংলা লিপি ঢ-ঢ়, ড-ড়, য-য়-তে সমস্যা থাকাতে বড় তথ্য (বিগ-ডাটা) বিশ্লেষণ, সার্চ ইঞ্জিন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় এবং ইন্টারনেট অব থিংসে বেশ সংকট দেখা দিচ্ছে। মুদ্রণজগতে ইংলিশ লিপির সঙ্গে বাংলা লিপির সাইজের ক্ষেত্রে তারতম্য বিদ্যমান। বিভিন্ন বাংলা সফটওয়্যার ব্যবহারে বাংলা লিপিতে চন্দ্রবিন্দুর ক্ষেত্রে তারতম্য লক্ষ করা যায়। যুক্তাক্ষরের ক্ষেত্রে সমস্যাটা প্রকট। এ বিষয়গুলোতে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলকে আরো সোচ্চার হতে হবে।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও রিসার্চ ফেলো, বিএনএনআরসি

শেয়ার করুন