‘হারানো যৌবন ফিরে পেতে’ কবিরাজের নির্দেশে যশোরে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন লিটন মালিতা (৪০) নামের এক যুবক। গ্রেপ্তারের পর যশোর ডিবি পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ কথা স্বীকার করেছেন লিটন। গ্রেপ্তারের সময় লিটন মালিতার কাছ থেকে একটি পুরুষাঙ্গ, অণ্ডকোষ ও একটি চোখ উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে মানিকগঞ্জর ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের চর বাইলজুরী এলাকা থেকে ঘিওর থানা-পুলিশের সহায়তায় লিটন মালিতাকে গ্রেপ্তার করে যশোর ডিবি পুলিশ। গ্রেপ্তার লিটন মালিতা চুয়াডাঙ্গা সদর থানার মোহাম্মদ জুমা গ্রামের মো. হানিফ মালিতার ছেলে।
গ্রেপ্তারের বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব বলেন, লিটন মালিতা গত মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে ধান কাটার শ্রমিক সেজে আসেন। সেই শ্রমিকের হাট থেকে ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের চর বাইলজুরী গ্রামের জনৈক কৃষক জিতু তাকে ধান কাটার কাজে বাড়িতে নিয়ে যান। আজ বুধবার দুপুরে তাকে স্থানীয় বৈলট চক থেকে ধান কাটার কাজরত অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়।
যশোর ডিবি পুলিশের বরাত দিয়ে ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজ উদ্দিন বলেন, যশোরে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পলাতক ব্যক্তিই হলেন লিটন মালিতা। হত্যাকাণ্ডের পর তিনি পালিয়ে চলে যান মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে। এরপর সেখানে শ্রমিক সেজে কাজ নেন ঘিওরের এক কৃষকের বাড়িতে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রিয়াজ উদ্দিন আরও বলেন, লিটন মালিতার বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদর থানার মোহাম্মদ জুমা গ্রামে। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ যৌনরোগে ভুগছিলেন। পরে স্থানীয় এক কবিরাজের শরণাপন্ন হন। সেই কবিরাজ লিটনকে যে কোনো একটি পুরুষাঙ্গ, অণ্ডকোষ ও একটি চোখ উপড়ে নিয়ে এলে হারানো যৌবন ফিরে পাবেন বলে জানান। সেই থেকে লিটন বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সুযোগ খুঁজতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় ধান কাটার শ্রমিক সেজে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দরাজহাট ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামে কাজ নেন। সুযোগ বুঝে কবিরাজের দেওয়া ‘মহৌষধের’ উপকরণ জোগাড় করতে অপর কৃষিশ্রমিককে হত্যা করেন তিনি। পরে সেখান থেকে পালিয়ে চলে আসেন মানিকগঞ্জ।
তিনি জানান, মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে বাঘারপাড়া থানায় একটি মামলা হয়। যার নম্বর ১৮/ধারা ৩০২ ও ২০১/৩৪ দণ্ডবিধি। আলোচিত এ ঘটনায় মাঠে নামে যশোর ডিবি পুলিশ। এরপর আজ বুধবার তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় যশোর ডিবি পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে হত্যার স্বীকার ব্যক্তির পুরুষাঙ্গ, অণ্ডকোষ ও একটি চোখ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু কবিরাজের নাম-ঠিকানা তার জানা নেই বলে জানিয়েছেন লিটন।
হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে যশোরের বাঘারপাড়া থানার ওসি ফিরোজ উদ্দিন ও বাঘারপাড়া উপজেলার স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যশোরের বাঘারপাড়ায় নকিম উদ্দীন (৬০) নামের এক কৃষককে হত্যা করা হয়েছে। গত সোমবার দিবাগত রাতে উপজেলার দরাজহাট ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামে এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে। সকালে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ ও আলামত হিসেবে হত্যায় ব্যবহৃত একটি চাকু উদ্ধার করেছে বাঘারপাড়া থানা-পুলিশ। নিহত নকিম উদ্দীন উপজেলার ধুপখালী গ্রামের মৃত দলিলুদ্দিন মোল্যার ছেলে।
ঘটনার বর্ণনায় জানা যায়, গত ২৬ মে উপজেলার ছাতিয়ানতলা বাজার থেকে ধান কাটার জন্য শ্রমিক হিসেবে নকিম উদ্দীনসহ তিনজনকে বাড়িতে নিয়ে যান পাইকপাড়া গ্রামের মৃত ইবাদ মোল্যার ছেলে বেনজির আহম্মেদ (৪২)। এর মধ্যে গত রোববার বিকেলে পারিশ্রমিকের টাকা বুঝে নিয়ে একজন শ্রমিক চলে যান। বাকি দুজন রাতে খেয়ে এক কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সোমবার সকাল বেলা ৬টায় শ্রমিকদের ডাক দিলে বাইর থেকে দরজা খোলা দেখতে পান বেনজির আহম্মেদ। দরজা খোলা দেখে তিনি ভেতরে গিয়ে দেখেন জখম অবস্থায় শ্রমিক নকিম উদ্দীনের মরদেহ খাটের ওপর পড়ে আছে। এ সময় থানায় সংবাদ দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাঘারপাড়া থানার ওসি ফিরোজ উদ্দিন বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে নকিম উদ্দীন নামের এক বৃদ্ধ শ্রমিকের মরদেহ ও আলামত হিসেবে একটি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত ওই ব্যক্তিকে প্রথমে গলায় পাটের রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে তাঁর পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা হয় ও ডান চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। সঙ্গে থাকা অপর শ্রমিক পলাতক ছিলেন