১৯৯১ সালে প্যারাসিটামল সিরাপ ও ২০০৯ সালে রীড ফার্মার প্যারাসিটামল ওষুধ খেয়ে মৃত্যুবরণ করা ১০৪ শিশুর পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা করে দিতে বলেছেন হাইকোর্ট।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ওই অর্থ আদায় করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে এই নির্দেশ পালন করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে গাইডলাইন তৈরি ও এন্টিবায়োটিকের মান যাচাইয়ে ল্যাবরেটরি টেস্ট করতে বলা হয়েছে। এ সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিও করতে বলেছেন আদালত।
২০১০ সালে করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে এক রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার (২ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট রিপন বাড়ৈ, অ্যাডভোকেট একলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট সঞ্জয় মণ্ডল ও অ্যাডভোকেট শাহিন আরা লায়লী। অন্যদিকে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান।
রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ আদালতে বলেন, নাগরিকের মৌলিক অধিকার হলো বেচে থাকা। কিন্তু ভেজাল ওষুধের কারণে অনেককে মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ ধারায় ভেজাল ওষুধের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান থাকলেও তা প্রায় কার্যকর হয়নি।
রায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে ভেজাল প্যারাসিটাল সিরাপ সেবন করে ৭৬ শিশু মারা যায়। এরপর ২০০৯ সালে রীড ফার্মার প্যারাসিটামল খেয়ে মারা যায় ২৮ শিশু। এ ঘটনায় ২০১০ সালে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে জনস্বার্থে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) হাইকোর্টে রিট করে।
ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করেছিলেন। ওই রুলের বিষয়ে দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত এই রায় দিলেন।
রায়ে বলা হয়েছে, ওই ১০৪ শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও কোম্পানির কাছ থেকে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর অর্থ আদায় করবে।
এছাড়া ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিষ্ক্রিয়তা অবৈধ ঘোষণা, ভেজাল ওষুধের অপরাধে বিশেষ ক্ষমতা আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
পাশাপাশি আদালত বলেছেন, ভেজাল ওষুধের কারণে শিশু মৃত্যুর দায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর এড়াতে পারে না।
২০০৯ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত রীড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবন করে সারাদেশে ২৮ শিশু মারা যায়। এ ঘটনায় ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক মো. শফিকুল ইসলাম ঢাকার ড্রাগ আদালতে কোম্পানিটির মালিকসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।