পাচার করা অর্থ দেশে আনার সুযোগ দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে: টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। ফাইল ছবি

২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশ থেকে পাচার করা অর্থ বিনা প্রশ্নে ফেরত আনার সুযোগ রাখা হয়েছে। এই সুযোগকে ‘অনৈতিক, অসাংবিধানিক ও বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’ বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থাটি বলছে, এই সুযোগ অর্থ পাচারের মতো অপরাধকে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা দেওয়ার নামান্তর। এতে অর্থ পাচারসহ সার্বিকভাবে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হবে।

আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশ থেকে পাচার করা অর্থ বিনা প্রশ্নে ফেরত আনতে বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশে নতুন বিধান সংযোজনের প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। নামমাত্র কর দিয়ে প্রশ্নহীনভাবে পাচার করা অর্থ বিদেশ থেকে আনার সুযোগ স্পষ্টতই অর্থ পাচারকারীদের অনৈতিক সুরক্ষা প্রদান। অথচ অর্থ পাচার রোধ আইন অনুযায়ী অর্থ পাচার গুরুতর অপরাধ। দেশের আইন অনুযায়ী যার শাস্তি পাচার করা অর্থ বাজেয়াপ্ত এবং তার দ্বিগুণ জরিমানা ও ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড।

পাচার করা অর্থ বৈধ করার সুযোগকে কালোটাকা সাদা করার বেআইনি সুযোগের ধারাবাহিকতা বলে মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, বারবার সুযোগ দিয়েও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ প্রত্যাশিত ফল বয়ে আনেনি। যারা অর্থ পাচার করেছেন, তারা এ ধরনের প্রণোদনায় উৎসাহিত হয়ে পাচার করা অর্থ ফেরত নিয়ে আসবেন, এ রকম দিবাস্বপ্নের কোনো ভিত্তি নেই। অর্থ পাচারকে এভাবে লাইসেন্স দেওয়া হলে দেশে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার আরও বিস্তৃতি ও গভীরতা লাভ করবে।

যারা বৈধ উপার্জননির্ভর করদাতা, তাদের জন্য এই প্রস্তাবকে প্রকটভাবে বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বৈধ করদাতাদের জন্য এটি বৈষম্যমূলক ও সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থী। তিনি এই অন্যায়, অপরিণামদর্শী ও আত্মঘাতী পথ থেকে সরে আসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকটগুলোকে স্বীকার করলেও সেগুলো মোকাবিলায় কার্যকর কৌশল বা পথনির্দেশিকা দিতে পারেননি বলে মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে আরও বড় করার প্রত্যাশা থাকলেও প্রস্তাবিত বাজেটে তার কোনো নিদর্শন দেখা যায়নি। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের ব্যয়কে বড় করে দেখাতে সরকারি কর্মচারীদের পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ ও করোনার অভিঘাত উত্তরণে দেওয়া ঋণের সুদ মওকুফকে অন্তর্ভুক্ত করে দেখানো হয়েছে। এগুলো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অংশই নয়।

প্রস্তাবিত বাজেটকে ঢেলে সাজানোর প্রস্তাব দিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় যেসব চ্যালেঞ্জের উল্লেখ করেছেন, সেগুলো মোকাবিলার কার্যকর কৌশল নির্ধারণে বাস্তবসম্মত ও নিরপেক্ষ দিকনির্দেশনার জন্য অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন।

শেয়ার করুন