পদ্মা সেতু ও পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর ছাড়া অন্য মেগা প্রকল্পগুলোতে বৈদেশিক অর্থায়ন থাকায় প্রকল্প-সংক্রান্ত আমদানি ব্যয় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্যে কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ বুধবার জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
১৬টি মেগা প্রকল্পের তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মেগা প্রকল্প অনুমোদনের আগে যথাযথভাবে এর আর্থিক ও অর্থনৈতিক দিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা নেই। যে কারণে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ধারা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে। প্রকল্পগুলো অধিকাংশ বৈদেশিক ঋণ/অনুদান সহায়তায় করা হলেও এগুলোর সুদের হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম এবং ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ও গ্রেস পিরিয়ডও অনেক। ঋণের অর্থ অবমুক্তির ক্ষেত্রে বড় কোনো জটিলতা পরিলক্ষিত হয়নি।
প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নকালে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্পকেন্দ্রিক অনেক ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প/ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। ফলে পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা মূলত ব্যাহত হওয়ার পরিবর্তে ত্বরান্বিত হচ্ছে। তা ছাড়া এসব প্রকল্পের (পদ্মা বহুমুখী সেতু ও পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প ছাড়া) বৈদেশিক অর্থায়ন থাকায় প্রকল্প-সংক্রান্ত আমদানি ব্যয় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্যে কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতিমারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উৎপাদন ও সরবরাহব্যবস্থার অবনতি ঘটে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি দেখা দেয় ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশে দ্রব্যসামগ্রীর উৎপাদন বৃদ্ধি ও সরবরাহ অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছে। দুঃখের বিষয় হলো, দেশের অভ্যন্তরে কিছু অসাধু ব্যক্তি এই সুযোগ নিয়ে নিত্যপণ্যের অবৈধ মজুত ও মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছেন।
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, অবৈধ মজুত ও বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের পদক্ষেপের পর কেউ অবৈধভাবে কোনো পণ্য মজুত করলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নের জবাবে করোনা অতিমারি-পূর্ব তিনটি অর্থবছরের প্রবাসী আয়ের হিসাব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স হ্রাস পেয়েছে না বলে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কোভিড-পূর্ববর্তী স্বাভাবিক ধারায় ফিরতে শুরু করেছে বলে বলা যেতে পারে। ২০২০-২১ অর্থবছরে কোভিড অতিমারির সময় প্রবাসী আয়ে অস্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছিল।
২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী আয় কমার কিছু কারণ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ২০২০-২১ অর্থবছরের শুরুতে কোভিড অতিমারিতে প্রবাসীরা একধরনের অনিশ্চয়তা থেকে তাঁদের জমানো টাকা দেশে পাঠিয়েছিলেন। অনেকে চাকরি হারিয়ে বা ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে সব অর্থ দেশে নিয়ে এসেছেন। এখন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। অনেক প্রবাসী নতুন করে ব্যবসা শুরু করতে গিয়ে দেশে রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি কোভিড-১৯ অতিমারি সফলভাবে মোকাবিলা করে স্বাভাবিক ধারায় ফিরে এলেও বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগকারী প্রধান প্রধান দেশের অর্থনীতি এখনো স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসেনি। ফলে ওই দেশগুলোতে কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের আয় তুলনামূলকভাবে কম থাকায় রেমিট্যান্স পাঠানো কম হয়েছে। তিনি আরও বলেন, করোনা-পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ-যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সচল হয়েছে। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরেও অর্থের লেনদেন বেড়ে যাওয়া রেমিট্যান্স কমার কারণ হতে পারে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি ও বৈধপথে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে এর প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ ও কার্যক্রম চলমান। তিনি জানান, এখন ১৭০টি দেশে ১ কোটি ২০ লাখের বেশি কর্মী কর্মরত।
জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেনের প্রশ্নের জবাবে সংসদনেতা বলেন, ২০০৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে মোট ৭৬৯ দশমিক ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার ধরন পাল্টে যাওয়ায় অস্বাভাবিক হারে বজ্রপাতের সংখ্যা ও তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।