সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, জনদুর্ভোগ বাড়ছে

সিলেট প্রতিনিধি

টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটের নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সুরমা নদী উপচে নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়া কুশিয়ারা, লোভাছড়া, সারিসহ ছোট-বড় সবকটি নদীর পানি উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। নগরীর পাশাপাশি পুরো জেলায় অন্তত ৫০০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিকেল সাড়ে ৩টায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে।

universel cardiac hospital

বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর পানি সিলেট (নগরী) পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার ও কানাইঘাটে দশমিক ৯৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় নগরীতে ৪৫ মিলিমিটার ও কানাইঘাটে ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিকে কুশিয়ারা নদী ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার ও সারিঘাটে সারি নদী বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া লোভাছড়া ও ধলাই নদীর পানি যে কোনো সময় বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ জানান, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় নদ-নদীর পানি ক্রমশ বাড়ছে। ফলে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আগামী ১০ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে সিলেটে প্রচুর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ১৭ থেকে ১৯ জুন ভারী বর্ষণ হতে পারে। এছাড়া বাকি দিনগুলোতে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

এক মাসের মধ্যে নগরীর অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ নতুন করে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন। ইতিমধ্যে নগরীর উপশহর, মেন্দিবাগ, ছড়ারপার, মাছিমপুর, কালিঘাট, শেখঘাট, কাজিরবাজার, তালতলা, জামতলা, তোপখানা, ঝালোপাড়া, তেররতনসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে পানি উঠেছে।

অন্যদিকে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও সদর উপজেলার অন্তত ৫০০ গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে। এসব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি অফিসের ভেতরে পানি প্রবেশ করায় স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল বশিরুল ইসলাম জানান, এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় বন্যায় বিপুল সংখ্যক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যাকবলিত এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পানিবন্দি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে উপদ্রুত এলাকায় বিতরণের জন্য ২৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ হয়েছে। টানা বৃষ্টির কারণে উপজেলায় পাহাড় ধ্বসের আশঙ্কায় পাহাড়ের ঢালে বসবাসরত মানুষদের নিরাপদ স্থনে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনোয়ার সাদাত জানান, স্থানীয় প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতির দিকে সার্বিক নজরদারি রাখছেন। প্রয়োজনীয় স্থানে আশ্রয় কেন্দ্র চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন