সকল জল্পনার কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের ‘বিশেষ বর্ধিত সভা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় চার ঘন্টা ধরে চলা রুদ্ধদ্বার কক্ষে অনুষ্ঠিত ওই বিশেষ বর্ধিত সভা থেকে সর্বসম্মতভাবে আগামী ১৬ জুলাই নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
শনিবার (১৮ জুন) দুপুর ১২ টায় নবীনগর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বহুল প্রত্যাশিত ওই বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য ফয়জুর রহমান বাদলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
সভায় প্রধান অতিথি মোকতাদির চৌধুরী এমপি উপস্থিত সকল নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দেন এবং আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে দলকে ওয়ার্ড পর্যায়ে শক্তিশালী করার তাগিদ দেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জালালের পরিচালনায় বর্ধিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবুল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট শাহ আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী মন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল, জেলা আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক নবীনগর পৌরসভার মেয়র এডভোকেট শিব শংকর দাস, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. সৈয়দ মিজানুর রহমান, নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নিয়াজ মোহাম্মদ খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন চৌধুরী শাহান প্রমুখ।
বিশেষ বর্ধিত সভার শুরুতেই মিলনায়তনে উপস্থিত স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেবল আমন্ত্রিত সদস্যবৃন্দ ছাড়া অন্য সবাইকে হল রুমটি খালি করে দেয়ার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশনা দেন সভার প্রধান অতিথি।
এরপর আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা ব্যতীত দলটির অঙ্গ সংগঠনের সবাই হল রুম থেকে বেরিয়ে গেলে রুদ্ধদ্বার কক্ষে বর্ধিত সভা শুরু হয়।
প্রায় চারঘন্টা ধরে চলা সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা ছাড়াও উপজেলার ২১ টি ইউনিয়ন ও পৌর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতৃবৃন্দ দলটির বিভিন্ন ইতিবাচক ও নেতিবাচক কর্মকান্ড জেলার নেতৃবৃন্দের কাছে খোলামেলাভাবে তুলে ধরেন।
এ সময় বক্তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতির জনকের হাতেগড়া গণমানুষের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে আবারও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনতে আসন্ন সম্মেলনে দলে অনুপ্রবেশকারী হাইব্রিডদের বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পরীক্ষিত, ত্যাগী ও আদর্শিক নেতৃবৃন্দকে উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে নিয়ে আসার জন্য দাবি জানান।
পাশাপাশি সম্মেলনের পূর্বেই উপজেলার সবগুলো ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিগুলোতেও দলের ত্যাগী ও আদর্শিক নেতাদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করার জন্য জোর দাবি জানানো হয়।
পরে বর্ধিত সভায় সর্বসম্মতভাবে আগামী ১৬ জুলাই নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
প্রসঙ্গত, নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন করার লক্ষে সম্প্রতি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হালিমকে আহবায়ক করে নয় সদস্যের একটি প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়।
এরপর দলটির বিক্ষুব্ধ স্থানীয় নেতা উপজেলা আওয়ামীলীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি নিয়াজ মোহাম্মদ খানের নেতৃত্বে দলটির একাংশের নেতারা পাল্টা আরেকটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করেন। এতে সাধারণ নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দেয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
ফলে দীর্ঘ আট বছর পর গত ২১ মে নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও, পাল্টাপাল্টি দুটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠিত হওয়াসহ নানা কারণে গত ২১ মে সম্মেলনটি করা যায়নি।
তবে এবার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বিশেষ বর্ধিত সভাটি বিরোধপূর্ণ দুটি গ্রুপের নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়।