ওপেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ হলো ইরাক। তবে তেলসম্পদে একসময়ের সমৃদ্ধিশালী এই দেশ বছরের পর বছর ধরে প্রতিবেশী ইরানের কাছ থেকে গ্যাস কিনছে। ইরাকের বিদ্যুৎ খাতের এক-তৃতীয়াংশ জোগান দেয় ইরান।
ইরানের তেল ও গ্যাস খাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে আমদানি খাতে অর্থ পরিশোধ করা বাগদাদের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমদানি খাতে ইরাকের বকেয়া বেড়েছে। তেহরান আমদানি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।
এর প্রভাবে ইরাকের বেশির ভাগ জায়গায় বিদ্যুৎ–বিভ্রাট স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৪ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার এই দেশে এমন বিদ্যুৎ-সংকটের জন্য রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় পর্যায়ের দুর্নীতিকে দায়ী করা হয়েছে। খবর এএফপির।
বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের কারণে ২০১৯ সালের শেষ দিক থেকে ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বেশ কয়েকবার বিক্ষোভ হয়েছে। এসব বিক্ষোভের বেশির ভাগই হয়েছে ইরাকের দক্ষিণাঞ্চলে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শীর্ষ পাঁচটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় ইরাককে অন্তর্ভুক্ত করেছে জাতিসংঘ। গত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ইরাকে ১০টি বালুঝড় হয়েছে। খরা, মাটির ক্ষয়, উচ্চ তাপমাত্রা ও কম বৃষ্টিও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘটেছে।
ইরাকের প্রেসিডেন্ট বাহরাম সালেহ সতর্কতা জারি করে বলেন, ‘ইরাকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ জাতীয় গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, এই জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি।’
সালেহ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ইরাকের ৩৯ শতাংশ এলাকাকে প্রভাবিত করেছে মরুকরণ। এসব এলাকায় পানির সরবরাহ কমে যাচ্ছে। ফসলের ফলনও কম হচ্ছে।
ইরাকের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেইফ আল বদর বলেন, সামনের বছরগুলোয় দাবদাহ ও ধূলিঝড় আরও বাড়তে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে—এমন অনেককে সামনে আরও চিকিৎসা দিতে হতে পারে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইরাকের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এসব সংকট মোকাবিলার জন্য স্থিতিশীল নেতৃত্বের সংকট রয়েছে ইরাকে। কারণ, দেশটি গত অক্টোবরে নির্বাচনের পর থেকে রাজনৈতিকভাবে কিছুটা টালমাটাল পরিস্থিতিতে রয়েছে।
বিশ্বব্যাংক সতর্কতা জারি করে বলেছে, ইরাকে জলবায়ু সংকটের সমাধান না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু সংকটের কারণে ইরাক পানিসম্পদের ২০ শতাংশ হারাতে পারে।