গর্ভপাতের আইনি অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, এবার গর্ভপাতের বড়ি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিক্ষোভ নতুন মোড় নিতে পারে।
এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীদের গর্ভপাতের আইনি অধিকার বাতিলে আদালতের সিদ্ধান্তের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তাঁর প্রশাসন গর্ভপাতের ওষুধের সহজলভ্যতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে রক্ষণশীল দল গর্ভপাত ওষুধের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিতে পারে।
৫০ বছরের পুরোনো গর্ভপাতের সাংবিধানিক সুরক্ষাবিষয়ক আইন বদলে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট। স্থানীয় সময় গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আদালত এ সিদ্ধান্ত দেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক অঙ্গরাজ্যেই গর্ভপাত নিষিদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হলো।
আদালতের এ সিদ্ধান্তের কয়েক ঘণ্টা পরই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মার্কিন নারীদের কাছে গর্ভপাতের ওষুধ সহজলভ্য রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের আদেশ দিয়েছেন।
টিভিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শুক্রবার বাইডেন বলেন, আদালতের আজকের সিদ্ধান্তে যেসব নারীর ওপর প্রভাব পড়বে, তাদের অধিকার রক্ষায় আমি আমার ক্ষমতার সবটুকু ব্যবহার করব।
যুক্তরাষ্ট্রে অর্ধেকের বেশি গর্ভপাতের ঘটনা ঘটে গর্ভপাতের ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে। গর্ভধারণের ১০ সপ্তাহ পর্যন্ত কোনো ধরনের ঝুঁকি ছাড়াই এই ওষুধ খেয়ে গর্ভপাত ঘটাতে পারেন নারীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ১১ অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাত নিয়ন্ত্রণ বা পুরোপুরি বাতিলে জোরালো দাবি ওঠে। এসব অঙ্গরাজ্যের মধ্যে বেশিরভাগই রিপাবলিকানদের নেতৃত্বাধীন। অন্য অঙ্গরাজ্যগুলোও তাদের অনুসরণ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে সুপ্রিম কোর্টের বাইরে আদালতের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন মার্কিন নারীরা। এ সময় তাদের হাতে পোস্টারে লেখা ছিল ‘গর্ভপাতের ওষুধ নারীরা কোথায় পাবেন’। বিক্ষোভ সমাবেশে থাকা অন্য নারীরা ‘আমার শরীর, আমার পছন্দ’ বলে স্লোগান দেন।
অস্ট্রিয়াভিত্তিক সংস্থা এইড অ্যাকসেস পরিচালনা করেন নেদারল্যান্ডসের চিকিৎসক রেবেকা গমপার্টস। তাঁর এই সংস্থা গর্ভপাতের ওষুধ সরবরাহ করে। গমপার্টসের ধারণা, গর্ভপাতকে বৈধতা দেওয়া ১৯৭৩ সালের আইনি সিদ্ধান্ত ‘রো বনাম ওয়েড’–এর আগে নারীদের যেমন অবস্থা ছিল, এখন তেমনটা হবে না। গর্ভপাতের ওষুধের ব্যবহার বন্ধ হবে না বলে বিশ্বাস করেন গমপার্টস।
এএফপিকে ফোনে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন গমপার্টস। তিনি বলেন, একজন নারী যদি অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এড়াতে চান, তাহলে তিনি সব সময়ই নিরাপদে গর্ভপাত ওষুধ ব্যবহার করতে পারবেন।
তবে শুক্রবারের রায়ের পর এটা করা ততটা সহজ হবে না বলে মনে করছেন অনেকে। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন দুই দশক আগে গর্ভপাতের ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে। গত বছর টেলিমেডিসিন ও মেইলের মাধ্যমে এ ধরনের ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে রাখা যাবে বলেও অনুমতি দেওয়া হয়।
তবে গর্ভপাতবিরোধী অঙ্গরাজ্যগুলোয় এ ধরনের ওষুধের ব্যবহার নিয়ে আইনি ধোঁয়াশা তৈরি হতে পারে। ভবিষ্যতে প্রজনন অধিকার নিয়ে আদালতে এ ইস্যুতেও আইনি লড়াই হতে পারে।