কঠোর অস্ত্র আইনের জাপানে আবের হত্যা কীভাবে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনা শোকাহত করেছে পুরো দেশটিকে। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাপানে গোলাগুলির ঘটনার হার বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর কারণ, দেশটির কঠোর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন। এরপরও দেশটিতে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর হত্যার ঘটনা বিস্মিত করেছে সারা বিশ্বকেই।

আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় সকালে জাপানের নারা শহরের দলীয় প্রচারাভিযানের সময় গুলিবিদ্ধ হন আবে। মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিয়ো কিশিদা। জাপানে বন্দুক নিয়ে হামলার ঘটনা একেবারেই বিরল।

universel cardiac hospital

অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সিডনির স্কুল অব পাবলিক হেলথের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে জাপানে গুলিতে নয়জনের মৃত্যু হয়। আর সে বছর যুক্তরাষ্ট্রে গুলিতে নিহতের সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৭৪০।

ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাউন্সিলের জাপানবিষয়ক পরিচালক ন্যান্সি স্নো বলেন, আবের এই গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনা জাপানকে অনেকটা পাল্টে দেবে।

স্নো সিএনএনকে বলেন, জাপানে গুলি করে হত্যার ঘটনা শুরু বিরল নয়, এটি সত্যিকার অর্থে সাংস্কৃতিকভাবেও সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। আমাদের দেশে অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকের যে সংস্কৃতি আছে, তা জাপানের সাধারণ মানুষ কল্পনাও করতে পারে না। এ সময়টায় বলার মতো কিছু নেই। আমি আসলে ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।

পুলিশকে উদ্ধৃত করে জাপানের সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আবেকে যিনি গুলি করেছিলেন, তিনি চল্লিশোর্ধ এক ব্যক্তি। এ হামলায় ঘরে তৈরি একটি বন্দুক ব্যবহার করা হয়েছে।

জাপানের আগ্নেয়াস্ত্র আইন অনুযায়ী, জাপানে শুধু শটগান বিক্রির অনুমোদন আছে। ক্ষুদ্র অস্ত্র (রিভলবার, পিস্তল) রাখা এখানে আইনবিরুদ্ধ। এই আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়ার প্রক্রিয়াও অত্যন্ত জটিল এবং দীর্ঘ। এ জন্য প্রচণ্ড ধৈর্যের প্রয়োজন।

অস্ত্র পেতে হলে জাপানে একজন সম্ভাব্য ক্রেতাকে দিনব্যাপী ক্লাসে অংশ নিতে হয়, লিখিত পরীক্ষায় পাস করতে হয়। তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের পরীক্ষা এবং মাদকের পরীক্ষা দিতে হয়। তাঁর অতীত কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখা হয় ব্যাপকভাবে। আগে অপরাধের কোনো ঘটনায় জড়িত ছিলেন কি না, ব্যক্তিগত ঋণ আছে কি না, সংঘববদ্ধ কোনো অপরাধে সম্পৃক্ততা আছে কি না বা পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কও এখানে খতিয়ে দেখা হয়।

অস্ত্রের নিবন্ধন পাওয়ার পর এর মালিককের অবশ্যই পুলিশের কাছে থেকে এ অস্ত্রের নিবন্ধন করতে হয়। এ অস্ত্র কোথায় রাখা হবে তা জানাতে হয়। একটি পৃথক এবং তালাবদ্ধ স্থানে এটি রাখতে হয়। প্রতিবছর অন্তত একবার এ অস্ত্র পুলিশকে দেখাতে হয়। অস্ত্রের নিবন্ধনের নবায়ন করতে প্রতি তিন বছর পর প্রশিক্ষণ নিতে হয় এবং পরীক্ষায় বসতে হয়।

এসব কঠোর নিয়মনীতির কারণে জাপানে ব্যক্তিগত অস্ত্রের মালিকের সংখ্যা খুব কম। ২০১৭ সালে সাড়ে ১২ কোটি মানুষের দেশটিতে মাত্র ৩ লাখ ৭৭ হাজার মানুষের নিবন্ধিত অস্ত্র ছিল। প্রতি ১০০ জনে এ সংখ্যা শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রে এ হার প্রতি ১০০ জনে ১২৫। এ তথ্য জেনেভার গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের ক্ষুদ্র অস্ত্রসংক্রান্ত জরিপের।

শেয়ার করুন