আন্তর্জাতিক লেনদেনে ভারসাম্যের চাপ সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এরই মধ্যে অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আইএমএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক শুরু করেছে। এক দশক পর আইএমএফের কাছে ঋণ চাইলো বাংলাদেশ।
বুধবার শেরে বাংলা নগরের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আইএমএফের এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের প্রধান রাহুল আনন্দের নেতৃত্বে একটি দল পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। সাক্ষাৎ শেষে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এসব কথা বলেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে আইএমএফের আবাসিক প্রতিনিধি জয়েন্দু দেসহ সংশ্লিষ্টরা। এটি মূলত আইএমএফের আর্টিকেল ফোর মিশনের দল। দলটি বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও ইআরডির সঙ্গে বৈঠক করছে। এই ধারাবাহিকতায় প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আইএমএফের কাছে সহায়তা চাচ্ছি, তারা দিতেও রাজি। তারা আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা জানার জন্য এসেছে। সহায়তার কারণ কী? কতটুকু সহায়তা চাই এগুলো সচরাচর জানতে চায় আইএমএফ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা সার্বিক বিষয়ে তাদের বলেছি। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিষয়ে আমরা ব্যাখ্যা করেছি। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রগতি নিয়ে বলেছি। আমাদেরর অর্থের প্রয়োজন বিশেষ করে মূল্যস্ফীতি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বা ডলারের এখন বেশি প্রয়োজন।
শামসুল আলম বলেন, মূল্যস্ফীতির কারণে আমদানির পরিমাণ বেশি হয়ে যাচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে যে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন আমরা তা সংস্থাটির কাছে তুলে ধরবোই। আইএমএফ সেই সহায়তা দিতেও প্রস্তুত। সেই ক্ষেত্রে তারা (আইএমএফ) ডলার সংকটের কারণ জানতে চেয়েছে। তবে আমরা বলেছি ডলার সংকট বেশিদিন থাকবে না। কারণ গত বছর তিন লাখ শ্রমিক বিদেশে গিয়েছিল এবার সেটা বেড়ে ৯ লাখ হয়েছে। প্রবাসীরা ডলার পাঠাতে শুরু করলে সেই সমস্যা থাকবে না। কয়েক মাসের মধ্যেই তারা রেমিট্যান্স পাঠাবে ফলে সংকট কাটিয়ে উঠবে।
‘দরদাম বেড়ে যাওয়ার কারণে মূলত আমদানি বেড়ে গেছে। রপ্তানি বাড়লে আমদানি বাড়বে। কারণ অনেক কাঁচামাল ও উপকরণ আমদানি করতে হয় রপ্তানির জন্য। আমরা বিলাসবহুল পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছি। ফলে ডলারের সংকট কমে যাবে। আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমে আসছে। আমাদের শিল্পখাত ও সেবা খাত ভালো করেছে। রাশিয়া থেকে গম আমদানি প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। সব মিলিয়ে আমরা ইতিবাচক। আইএমএফ রাজস্ব আয় বাড়াতে বলেছে। করের আওতা বাড়াতে তাগিদ দিয়েছে। সরকার ভ্যাট আদায়ে অটোমেশনে আসছে রাজস্ব বৃদ্ধিতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
আইএমএফের শর্ত প্রসঙ্গে ড.শামসুল আলম বলেন, আইএমএফ শর্ত দিচ্ছে না। তারা শর্তের বিষয়ে উদারতা দেখিয়েছে। আমাদের প্রচুর তহবিল প্রয়োজন।
কোন খাতে সহায়তা চেয়েছেন, এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আইএমএফ বাজেট সাপোর্ট দেবে। বাজেটের টাকা যে কোনো খাতে খরচ করা যায়। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও মানবসম্পদ উন্নয়নের বিষয়ে আমরা সহায়তা চেয়েছি।