বড় প্রকল্পের ঋণ পরিশোধে বড় ধাক্কা আসছে: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেগা বা বড় প্রকল্পে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ২০২৪ থেকে ২০২৬ সালের মধ্যে অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা আসছে। মেগা প্রকল্পে ঋণ পরিশোধের সময় এগিয়ে আসছে, যা অর্থনীতির জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় একটি পরিকল্পনা প্রয়োজন।

আজ বৃহস্পতিবার দেশের ২০টি বড় প্রকল্প নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। অনলাইনে অনুষ্ঠিত ওই আলাপচারিতায় তিনি এসব কথা বলেন।

universel cardiac hospital

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, বর্তমানে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে বিদেশি দায়দেনা পরিশোধ করা হয় ১ দশমিক ১ শতাংশের মতো। ২০২৬ সাল নাগাদ তা দ্বিগুণ হতে পারে। এই হার ২ শতাংশের পৌঁছানোর আশঙ্কা রয়েছে।

তখন বাংলাদেশ সমস্যায় পড়বে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি আসলে নির্ভর করবে ওই সময়ে দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি কেমন থাকে, অর্থনীতি কতটা সুসংহত থাকে, তার ওপর।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, বড় প্রকল্পের ক্ষেত্রে রাশিয়া, চীন ও জাপানকেই বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হবে। তার মধ্যে চীনের ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বেশ কম।

দেশের ২০টি বড় প্রকল্প বিশ্লেষণ করেন দেবপ্রিয ভট্টাচার্য। এসব প্রকল্পের তালিকার অন্যতম হলো পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ ইত্যাদি। এসব প্রকল্পে প্রায় ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৬২ শতাংশ বিদেশি ঋণ।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ২০০৯ সাল থেকে বড় প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে একধরনের জাতীয় ঐকমত্য আছে। বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখা যায় বলে রাজনীতিবিদেরা এতে আগ্রহ দেখান।

ওই ২০টি প্রকল্প ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও চলতি দশকে সব কটি শেষ করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। প্রকল্প বাস্তবায়নে একধরনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।

বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা শুরুকে ভালো দিক হিসেবে অভিহিত করেছেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

তিনি বলেন, ২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার হোক আর সাড়ে চার বিলিয়ন বা ৪৫০ কোটি ডলার হোক—আইএমএফের কাছে অর্থ নেওয়ার প্রয়োজন আছে। এর ফলে মধ্য মেয়াদে অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করবে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে। বিদেশি বিনিয়োগকারী ও উন্নয়ন সহযোগীরা এক ধরনের আস্থা পাবেন। তারা মনে করেন, বাংলাদেশকে এক ধরনের পরিবীক্ষণ ও নজরদারিতে রাখছে আইএমএফ।

তিনি এই প্রসঙ্গে সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কার আইএমএফের অর্থ না নেওয়ার সিদ্ধান্তের উদাহরণটি তুলে ধরেন।

গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, প্রয়োজন থাকলে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হবে। এ মুহূর্তে বিদেশি ঋণের প্রয়োজন নেই।

শেয়ার করুন