আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলায় শীর্ষ আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি নিহত হয়েছেন। তিনি ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ওসামা বিন লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্রে হামলার পরিকল্পনা করতে সহায়তা করেছিলেন বলে এপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সোমবার আল-জাওয়াহিরিকে হত্যার ঘোষণা দিয়েছেন। মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান ছাড়ার মাত্র ১১ মাস পর এ ঘটনা ঘটলো।
মার্কিন প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাংবাদিকদেরকে বলেছেন, জাওয়াহিরি অনেক বছর ধরে লুকিয়ে ছিল এবং তাকে খুঁজে বের করে হত্যা করার ঘটনাটি কাউন্টার-টেররিজম ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ‘অত্যন্ত ধৈর্যশীল ও অবিচল’ কাজের ফল। যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার আগ পর্যন্ত পাকিস্তানের বা আফগানিস্তানের আশেপাশে লুকিয়ে আছেন বলে গুজব ছড়িয়েছিল।
কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার একটি নেটওয়ার্কের বিষয়ে সজাগ ছিল। তাদের ধারণা ছিলো জাওয়াহিরিকে তারা আশ্রয় দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সরে আসার পর গত এক বছর ধরে আফগানিস্তানে আল-কায়েদার উপস্থিতির ওপর নজর রাখছিলেন মার্কিন কর্মকর্তারা। চলতি বছর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জাওয়াহিরির পরিবারকে শনাক্ত করে। এদের মধ্যে ছিলেন তার স্ত্রী, তার কন্যা ও তাদের সন্তানরা। তাদের কাবুলের একটি নিরাপদ বাড়িতে রাখা হয়েছিল। পরে ওই একই বাড়িতে জাওয়াহিরির উপস্থিতিও টের পায় মার্কিন গোয়েন্দারা।
কয়েক মাসের মধ্যে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা নিশ্চিত হন যে তারা সঠিকভাবেই জাওয়াহিরিকে শনাক্ত করতে পেরেছেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেইক সালেভান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বিষয়টি জানান। এরপর তারা একটি পরিকল্পনার করেন কীভাবে অভিযান পরিচালনা করবেন।
ওই ভবনের কাঠামো হামলার জন্য কোন হুমকি তৈরি করে কিনা বা জাওয়াহিরির পরিবারের সদস্যদের কোন ক্ষতি না করে কীভাবে জাওয়াহিরিকে হত্যা করা যায় সে পরিকল্পনা করেন তারা। পরে সিআইএ-র পরিচালক উইলিয়াম বার্নস মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং তাদের অভিযানের বিষয়ে জানান।
এমনকি কাবুলে হামলা চালালে কোন প্রভাব পড়তে পারে কিনা তাও বিশ্লেষণ করে দেখেন তারা। এছাড়া জাওয়াহিরিকে হত্যা করলে তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়েও পর্যালোচনা করেছেন তারা। এরপর কাবুলের স্থানীয় সময় রোববর ৬টা ১৮ মিনিটে একটি ড্রোন থেকে দুটি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে জাওয়াহিরিকে হত্যা করা হয়। তখন জাওয়াহিরি বাড়িটির ব্যালকনিতে আসেন এবং সেখানে অবস্থান করেছিলেন। ওই হামলায় ব্যালকনিতে একা দাঁড়িয়ে থাকা আল-জাওয়াহিরি নিহত হন।
আল-জাওয়াহিরি একজন মিশরীয় নাগরিক। তিনি ১৯৫১ সালের ১৯ জুন কায়রোর শহরতলিতে একটি ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। আল-জাওয়াহিরি একজন তরুণ চক্ষু সার্জন হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি মধ্য এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে ঘুরে বেড়ান এবং সোভিয়েত দখলদারদের বিরুদ্ধে আফগানদের যুদ্ধের সাক্ষী ছিলেন। সে সময় তিনি তরুণ ওসামা বিন লাদেন এবং অন্যান্য আরব জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। যা আফগানিস্তানকে সোভিয়েত সেনাদের বিতাড়িত করতে সহায়তা করেছিল।
টাইমস ইন্ডিয়া বলছে, ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতকে হত্যার পর মিশরের কারাগারে আটক ও নির্যাতিতদের একজন ছিলেন আল-জাওয়াহারি। এই অভিজ্ঞতা তাকে আরও উগ্রবাদী করে তোলে। সাত বছর পর যখন বিন লাদেন আল-কায়েদা প্রতিষ্ঠা করেন তখন আল-জাওয়াহিরি তাতে যোগ দেন। আল-জাওয়াহিরি তার নিজের মিশরীয় জঙ্গি গোষ্ঠীকে আল-কায়েদার সঙ্গে একীভূত করেন।