ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশ মিশনের উপপ্রধান কাজী আনারকলির বাসায় ‘মাদক পাওয়ার ঘটনায়’ তাকে ঢাকায় প্রত্যাহার করে আনার ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক ও বিব্রতকর’বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, জাকার্তায় বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত উপরাষ্ট্রদূতের বাসায় নিষিদ্ধঘোষিত মাদক পাওয়ার অভিযোগের বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তার এ ঘটনায় যুক্ততার বিষয়টি সরকারের জন্য বিব্রতকর।
ইন্দোনেশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের উপরাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহারের বিষয়ে জানতে চাইলে আজ মঙ্গলবার তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী। জুলাইয়ের শুরুতে জাকার্তায় কর্মরত বাংলাদেশের ওই কূটনীতিকের বাসায় নিষিদ্ধঘোষিত মাদক খুঁজে পাওয়ার অভিযোগ ওঠে। ইন্দোনেশিয়া সরকার বাংলাদেশের ওই কূটনীতিককে জাকার্তা থেকে ঢাকায় ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশকে অনুরোধ জানায়। এ পরিস্থিতিতে সরকার জাকার্তায় বাংলাদেশ দূতাবাসের উপরাষ্ট্রদূত কাজী আনারকলিকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনে।
এ নিয়ে জানতে চাইলে মো. শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের জন্য বিব্রতকর। আমরা এর তদন্ত করছি। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিয়েনা সনদ অনুযায়ী, দায়মুক্তির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তাঁকে এর মধ্যেই দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এটির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে।
বাংলাদেশের জন্য বিব্রতকর কি, এমন এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘ওই ঘটনা বলি, খবর বলি, আমাদের একজন কর্মকর্তা এর মধ্যে যুক্ত, এটা আমাদের জন্য বিব্রতকর। তিনি নিজে করেছেন, না তাঁর বন্ধু করেছেন, সেটা তদন্তের পরে আসবে। তবে পুরো বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক।’
জানা গেছে, ইন্দোনেশিয়ার মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের একটি দল ৫ জুলাই হঠাৎ জাকার্তায় বাংলাদেশ দূতাবাসের উপরাষ্ট্রদূত কাজী আনারকলির বাসায় অভিযান চালায়। ওই অ্যাপার্টমেন্ট টাওয়ারে নিষিদ্ধ মাদক মারিজুয়ানা রক্ষিত আছে, এমন অভিযোগে অভিযান চলে। ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী, কূটনীতিক আনারকলি দায়মুক্তির আওতাধীন ছিলেন। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সেটি উপেক্ষা করেই বাসায় অভিযান চালায়। অভিযানের পর তাঁকে ইন্দোনেশিয়ার মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের দপ্তরে নেওয়া হয়। অবশ্য কয়েক ঘণ্টা পর দূতাবাসের জিম্মায় ছাড়া পান তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘটনাটি জানার পর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়। তাঁর দেশে ফেরার আদেশ জারি করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এর আগে জানান, সম্প্রতি জাকার্তায় কর্মরত এক কূটনীতিককে শিষ্টাচার ও তাঁর দায়িত্বের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ আচরণের অভিযোগে ঢাকায় বদলি করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণিত হলে বিধি অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশের কূটনীতিক কাজী আনারকলির জাকার্তার যে অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালানো হয়েছে, সেটি তিনি নাইজেরিয়ার এক নাগরিকের সঙ্গে ভাগাভাগি করে থাকতেন। তিনি নাকি নাইজেরিয়ার ওই নাগরিক নিষিদ্ধ মারিজুয়ানা রেখেছিলেন, সে সম্পর্কে অস্পষ্টতা থাকায় ইন্দোনেশিয়া সরকারের কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন পাঠানোর অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ।